ঢাকা, রবিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৫  |  Sunday, 12 October 2025  |  এখন সময়:

Advertise@01680 34 27 34

রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা স্থিতিশীল নয়


অনলাইন ডেস্কঃ

প্রকাশিত:   ০২:০৮ এএম, রবিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৫   আপডেট:   ০২:০৮ এএম, রবিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৫  
রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা স্থিতিশীল নয়
রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা স্থিতিশীল নয়

মূলত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা এখনো একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে রয়েছে। আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে এই অস্থিতিশীলতা অর্থনৈতিক যুক্তির সঙ্গে মেলে না।

শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বেঙ্গল ডেলটা কনফারেন্স ২০২৫’-এর প্যানেল  আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা এ মন্তব্য করেছেন। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইটিকস (দায়রা) দুই দিনের এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে। উল্লেখ্য, দায়রা বঙ্গীয় বদ্বীপে জ্ঞানের উৎপাদন ও অগ্রগতি নিয়ে কাজ করে। প্রতিষ্ঠানটি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির গতিশীলতা বোঝাপড়ার চর্চায় নিবেদিত।

দুই দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী দিনে ‘ফ্রম কনফ্লুয়েন্স টু কোহেশন: বাংলাদেশ’স রোল ইন রিজওনাল ফরমেশন অ্যাক্রোস এশিয়া’ শিরোনামে দিনের শেষ প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, উচ্চ স্তরের দারিদ্র্য, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়াকে বিশ্বব্যাংক সাব-সাহারান আফ্রিকার বাইরে বিশ্বের সবচেয়ে কম সংযুক্ত অঞ্চল হিসেবে বর্ণনা করেছে।

এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ ফেলো মাইকেল কুগেলম্যান আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সার্ক মূলত নিষ্ক্রিয়, ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা, বিরোধী সীমান্ত এবং নাজুক অর্থনীতির কারণে সমস্যাগ্রস্ত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, আওয়ামী লীগের সরকারের পতনের পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এক বছর ধরে তিক্ত হয়ে রয়েছে। দশকের পর দশক ধরে ভারতের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক বজায় ছিল। তবে বর্তমানে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে—তাতে ভারত খুশি নয়। তিনি বলেন, ‘আমি বলছি না যে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত হবে না, তবে পূর্ববর্তী সরকারের সময় এক অনন্য সম্পর্ক ছিল; যা অনেক দিক থেকে বাংলাদেশকে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করতে সীমাবদ্ধ করেছিল।’ তিনি মনে করেন, এই দিক থেকে একটি সুযোগ আছে, যা বাংলাদেশ কাজে লাগাতে পারে।

দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক এই বিশেষজ্ঞ বলেন, বাংলাদেশের একটি নমনীয় পররাষ্ট্রনীতি রয়েছে, যা অঞ্চলজুড়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম, তবে এটি একটি অনুকূল পরিবেশের অভাবে ভুগছে। বাংলাদেশের প্রতিযোগী শক্তির সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখার সক্ষমতা রয়েছে। ২০২৩ সালের ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের অগ্রাধিকার উভয়কেই প্রতিফলিত করেছে, যা এই নমনীয়তা প্রদর্শন করে। বাংলাদেশ চীন, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য এবং বহু-তরফা ঋণদাতাদের মতো বাহ্যিক শক্তিগুলোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছে।

বাংলাদেশের সীমাবদ্ধতার কথা বলতে গিয়ে মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, সীমিত রপ্তানি পণ্য, অপ্রতুল বিদেশি বিনিয়োগ, সীমাবদ্ধ বেসরকারি খাত, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং মিয়ানমারের সংকট—যেখানে সশস্ত্র গ্রুপগুলো সীমান্তের বেশির ভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে—এগুলো ঢাকার আঞ্চলিক সক্ষমতা সীমিত করে।

সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অর্থনীতির অধ্যাপক মুশতাক খান ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রভাব বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ওপর ফেলার বিষয়ে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ভারত তার নিজস্ব মুসলিম নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে দিতে চাচ্ছে, বলছে তারা বাংলাদেশি।

মুশতাক খান বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে হিন্দুদের কোনো হুমকি হিসেবে দেখা হয় না, এমনকি সবচেয়ে ডানপন্থী কণ্ঠরাও তাদের হুমকি মনে করে না। তবে ভারতে মুসলমানদের সম্পর্কে যে আলোচনা হয়, তা বাংলাদেশের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। তিনি বলেন, ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশে আলোচনা ছিল যে ভারতকে প্রধান অংশীদার হিসেবে গ্রহণ করতে হবে, তবে এখন তা পরিবর্তিত হচ্ছে।

দিল্লির ও পি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, ভারতের সরকার সব সময় তার জাতীয় স্বার্থ নিয়ে চিন্তা করে। তিনি বলেন, কিন্তু বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ কী? হুমকির ধারণা, উভয় দেশের দিক থেকেই কাজ করে এবং ভারত এটি পুরোপুরি উপলব্ধি করেনি।

শ্রীরাধা দত্ত বলেন, ‘শুধু ভারতই নয়, দক্ষিণ এশীয় অন্য রাষ্ট্রগুলোরও সমস্যা রয়েছে। যদি আপনি ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের নেপাল সংযোগ দেখেন—এটি থেমে গেছে এবং এর পেছনে কোনো অর্থনৈতিক যুক্তি নেই। এগুলো মূলত রাজনৈতিকভাবে প্রেরিত, লাভের উদ্দেশ্যে নয়।’ তিনি সুপারিশ করেন, রাষ্ট্রগুলো নিজেদেরই সিদ্ধান্ত নেবে, যেখানে তাদের স্বার্থ সর্বাধিক করা হচ্ছে এবং তারা তাতে মনোযোগ দেবে। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশীয় সব রাষ্ট্রকেই একটি নতুন সূচনা করতে হবে।

প্যানেল আলোচক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সাবেক অধ্যাপক আমেনা মোহসিন বলেন, মানুষ অনেক সময় যোগাযোগ নিয়ে আলোচনা করেন, তবে এটি মনের যোগাযোগ নয়। যদি আপনি দক্ষিণ এশিয়া চান, তবে সেই দক্ষিণ এশিয়ানত্ব থাকতে হবে—এটা মানুষের মনের মিলন, যেখানে নিজেকে একজন দক্ষিণ এশীয় হিসেবে চিহ্নিত করতে পারবেন।

আলোচনা সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সাহাব এনাম খান।

বাংলাদেশ থেকে আরও পড়ুন

বাংলাদেশ ভারত কূটনীতি বেঙ্গল ডেলটা কনফারেন্স ২০২৫

আপনার মন্তব্য লিখুন...