Oops! It appears that you have disabled your Javascript. In order for you to see this page as it is meant to appear, we ask that you please re-enable your Javascript!
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৩  |  Thursday, 30 March 2023  |  এখন সময়:

Advertise@01680 34 27 34

কোটা নিয়ে আন্দোলন : লাভ ও ক্ষতি


নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত:   ০৭:০৪ এএম, বৃহস্পতিবার, ১২ এপ্রিল ২০১৮    
 কোটা নিয়ে আন্দোলন : লাভ ও ক্ষতি
কোটা নিয়ে আন্দোলন : লাভ ও ক্ষতি

কয়েকদিন ধরেই সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে- এই আন্দোলন কতটুকু যৌক্তিক? যারা কোটা সংস্কারের আন্দোলন করছেন আপনারা কি একবার ভেবেছেন কেন এই কোটা পদ্ধতি?

ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে যে রক্তিম লাল সবুজের পতাকা আমরা পেয়েছি, যারা আমাদের এ স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, তাদের রক্তে আজকে আমরা স্বাধীন দেশে বসে কোটার বিপক্ষে আন্দোলন করতে পারছি। সেই মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ও সমাজে শারীরিকভাবে অক্ষম , পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যেই কোটা পদ্ধতি।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের দেখে মনে হচ্ছে প্রতিবাদ নয় এক প্রকার প্রতিরোধ শুরু করে দিয়েছে। প্রশ্ন হলো কোটা সংস্কার এত ভাল একটা পদক্ষেপ সবার কাছে প্রশংসিত হবার কথা সেখানে সমালোচিত হচ্ছে কেন?

আমাদের দেশে বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ২ লাখের মত। এখানে কোটা ৩০%। প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ২০ লাখ ১৬ হাজার, এখানে কোটা ১%। দেশে উপজাতি ১৫ লাখ ৮৬ হাজার, কোটা ৫%। দেশে নারীর সংখ্যা প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ ৮ কোটি ৫০ লাখ, কোটা ১০%। জেলা কোটা আছে প্রায় ১০% শতাংশ। যেখানে দেশের প্রায় সব জেলার মেধাবীরাই আছে।

এই ৯ কোটির জন্য কোটা ৫৬ শতাংশ। বাকি থাকে আরও ৮ কোটি মানুষ। যাদের জন্য আছে ৪৪ শতাংশ। এছাড়া জেলার বাসিন্দা হিসেবে সব মেধাবীরাই কোটার আওতায় পড়ে। নারী হিসেবে প্রত্যেক মেধাবী নারী কোটার মধ্যে পড়ে। তাহলে কয়জন কোটার আওতায় পড়ে না, তা বোধগম্য নয়।

ইতোমধ্যেই, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বক্তব্য রাখার সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন ছাত্রদের দাবির প্রেক্ষিতে সরকারি চাকরিতে কোটা বিলুপ্ত করা হবে। তিনি আরো বলেছেন, ‘সরকারি চাকরির পরীক্ষা যারা দেয়, তারা সকলেই মেধাবী। কোটায় যারা, তারা একসাথেই পরীক্ষা দেয়। রিটেনে সবাইকে পাস করতে হয়। এরপরই কিন্তু চাকরিটা দেয়া হয়। সেখানে কোথায় কী সংস্কার? দাবিটা কিন্তু স্পষ্ট না।’

কোটা নিয়ে আন্দোলন করে কাদের লাভ হল? প্রত্যক্ষ ভাবে দেখলে আন্দোলনকারীদের। কিন্তু গভীরে চিন্তা করলে লাভ নয় তাদের ক্ষতিই হল। আমাদের গ্রাম প্রধান দেশ। বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ জনগণ গ্রামে বসবাস করে। এখন ধরা যাক শহরের একটি ছেলে ভাল একটা স্কুলে পড়ে স্কুল শেষে কোচিং, বাসায় শিক্ষক, নোটবই, ভালো খাওয়া, উন্নত চিকিৎসা, সুস্থ বিনোদন, হাওয়া বদল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট- গোটা বিশ্ব আসলে তার হাতের মুঠোয়। কিন্তু পিছিয়ে উত্তরবর্গ দিনাজপুরের, রাঙামাটির প্রান্তিক কৃষকের ছেলেমেয়েরা কিন্তু তাদের সাথে লড়াইয়ে টিকবে না তখন কিন্তু ঢাকার ২০টি সেরা স্কুলের ছাত্ররাই পাবে ৯০ ভাগ চাকরি।

মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করে অন্যায় করেছে। তাদের সন্তানদের কোটার দরকার নেই। ৭৫এর পর ২১ বছর তারা বঞ্চিত ছিল। আবারও বঞ্চিত থাকবে। কিন্তু মেধার জোরে যখন একজন যুদ্ধাপরাধীর সন্তান, স্বাধীনতা বিরোধীর ছেলে যখন চাকরি পাবে, চৌকস আমলা হবে; দেশটা কিন্তু তার মতই চালাবে। মনে রাখবেন দেশ এর যড়যন্ত্রকারীরাও মেধাবী।

এ আন্দোলন থেকে একটি বিশেষ গ্রুপের পক্ষ থেকে কেবল ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা’কে টার্গেট করে বক্তব্য দেয়া ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী একটি বিশেষ শ্রেণী আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে ওঠার অভিযোগও উঠেছে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ প্রগতিশীল অনেকেই সময়ের প্রয়োজনে কোটার পরিমাণ কমানোর পক্ষে থাকলেও আন্দোলনে বিশেষ গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।

আরেকটি খুবই জটিল এবং বিভ্রান্তিকর বক্তব্য হলো, কোটা আর মেধাবী। মনে হয় কোটা মানেই অমেধাবী। ব্যাপারটি মোটেই তা নয়। কোটা সুবিধা পেতে হলেও তো মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের, নারীদের, উপজাতিদের একটি ন্যূনতম যোগ্যতা অর্জন করেই আসতে হয়। প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা পর্যন্ত সবাইকে লড়তে হয় সমানতালেই।

কোনো মুক্তিযোদ্ধার এসএসসি পাশ ছেলে বা তৃতীয় শ্রেণি পাওয়া উপজাতি কেউ তো আর ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে যাচ্ছে না। বলা উচিত কোটা আর নন কোটা। সবাই তো মেধাবী। নইলে পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ পান কিভাবে? হয়তো ঊনিশ আর বিশ। উন্নত দেশগুলো আমাদের মত গরীব দেশকে এই ধরনের কোটা সুবিধা দেয় বৈষম্য কমাতে। তাই বৈষম্য কমানোটাই কোটা ব্যবস্থার মূল কথা।

মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০% জেলা কোটা ১০%, নারী কোটা ১০%, অনগ্রসর নৃ গোষ্ঠী ৫%, প্রতিবন্ধী ১%। কোটার যে হিসাব, তা মিলিয়ে দেখবেন, মেধাবী হতে গিয়ে, নিজের এবং দেশের এবং অন্য কত জনের ক্ষতি করলেন।

লেখক : কলামিস্ট।


আপনার মন্তব্য লিখুন...