ঢাকা, সোমবার ১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৭ | এখন সময়:

Advertise@01680 34 27 34

‘বোতল কুড়াইয়া উপকার করি, সরকার ঘর দিয়া আমার উপকার করল না’


অনলাইন ডেস্কঃ

প্রকাশিত:   ০২:০৩ এএম, শুক্রবার, ১০ মার্চ ২০২৩   আপডেট:   ০২:০৩ এএম, শুক্রবার, ১০ মার্চ ২০২৩  
‘বোতল কুড়াইয়া উপকার করি, সরকার ঘর দিয়া আমার উপকার করল না’
‘বোতল কুড়াইয়া উপকার করি, সরকার ঘর দিয়া আমার উপকার করল না’

বেলা দেড়টার দিকে মাথার ওপরে প্রখর তাপ ছড়াচ্ছে সূর্য। তপ্ত রোদে সড়কে মানুষ চলাচল কম। যানবাহনের ভিড়ও নেই। ৫০ বছর বয়সী নূরভানু বেগম ভ্যানগাড়িতে প্যাডেল দিয়ে ধীরগতিতে এগিয়ে চলছেন। সড়কে তাঁর সতর্ক দৃষ্টি প্লাস্টিকের বোতল, ফেলনা লোহা–লক্কড়সহ বিভিন্ন ভাঙারি সামগ্রীর দিকে। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে নূরভানু বেছে নিয়েছেন প্লাস্টিকের বোতল কুড়ানোর কাজ।

গত বুধবার দুপুরে ঝালকাঠি শহরের আড়দ্দারপট্টি এলাকার হরিসভার মোড়ে কথা হয় নূরভানুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সকালে কিছু খাই নাই। কিছু মালামাল বিক্রি করতে পারলে পেটে দানাপানি পড়বে। প্লাস্টিকের বোতল কুড়াইয়া উপকার করি। কিন্তু সরকার একখানা ঘর বা বয়স্ক ভাতা দিয়া আমার কোনো উপকার করল না।’

ঝালকাঠি শহরের পুরাতন কলাবাগান এলাকার সোহরাব হাওলাদারের স্ত্রী নূরভানু বেগম। শহরের অলিগলি আর গ্রামগঞ্জে ভাঙারি সামগ্রী কুড়িয়ে বিক্রি করে সংসার চালান। তাঁর নিত্যদিনের সঙ্গী একটি ভাড়া করা ভ্যান আর বড় একটি বস্তা। সড়কে পড়ে থাকা বিভিন্ন প্লাস্টিক সামগ্রী সংগ্রহ করেন তিনি। পরে তা কেজিদরে বিক্রি করে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা আয় করেন। এর মধ্যে প্রতিদিন ভ্যান ভাড়ার ৭০ টাকা গুনতে হয়। হাতে ২৫০ টাকার মতো থাকে। তাই সংসারের কাজে লাগান।

"চাউল-ডাইলসহ নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দামের লাইগ্যা ভালো–মন্দ কবে খাইছি হেয়া মনেও নাই। স্বামীর ওষুধ কেনা তো দূরে থাউক, দুই বেলা ভাত খাওয়াই দায়। শরীলডাও ঠিকমতো চলে না" - নূরভানু বেগম

স্বামী সোহরাব হাওলাদার বছরখানেক আগে রঙের কাজ করতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে পা ভেঙেছে। সেই থেকে তিনি আর ভারী কাজ করতে পারেন না। মাঝেমধ্যে দিনমজুরের কাজ করে কিছু আয় করেন। তাঁদের একমাত্র ছেলে রিয়াজ হাওলাদার বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছেন। তিনি মা-বাবার খোঁজ রাখেন না। তাই বাধ্য হয়ে নূরভানু ভ্যান চালিয়ে ভাঙারি সংগ্রহ করে সংসার চালান।

নূরভানু আক্ষেপ করে বলেন, ‘চাউল-ডাইলসহ নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দামের লাইগ্যা ভালো–মন্দ কবে খাইছি হেয়া মনেও নাই। স্বামীর ওষুধ কেনা তো দূরে থাউক, দুই বেলা ভাত খাওয়াই দায়। শরীলডাও ঠিকমতো চলে না।’

নূরভানু বলেন, প্রতি কেজি প্লাস্টিক ১২ টাকা, লোহা ৪৫ টাকা ও ভাঙা টিন ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়। তাঁর নিজের কোনো পুঁজি না থাকায় বাধ্য হয়ে পথেঘাটে প্লাস্টিক কুড়ানোর কাজ করেন। হাজার তিনেক টাকা নগদ পুঁজি থাকলে বাসাবাড়ি থেকে পুরোনো ভাঙাচোরা কিনে একটু বেশি লাভে বিক্রি করতে পারতেন। এতে পরিশ্রমও কম হতো। আবার ১০ হাজার টাকায় একটি ভ্যান কিনতে পারলে তাঁকে প্রতিদিন ৭০ টাকা ভাড়াও গুনতে হতো না।

ঝালকাঠি পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হুমায়ুন কবির বলেন, নূরভানু যাতে বয়স্ক ভাতা বা একটি সরকারি ঘর পেতে পারেন, সে বিষয়ে তিনি সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন।

বাংলাদেশ থেকে আরও পড়ুন

জীবনের গল্প মানুষের কথা বরিশাল বিভাগ প্লাস্টিক পণ্য ঝালকাঠি

আপনার মন্তব্য লিখুন...