ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪  |  Friday, 19 April 2024  |  এখন সময়:

Advertise@01680 34 27 34

সেনাশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ


অনলাইন ডেস্কঃ

প্রকাশিত:   ১১:০২ পিএম, বুধবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১    
সেনাশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
সেনাশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। দেশটির প্রধান শহরগুলোয় সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীরা স্থানীয় সময় বুধবার থেকে ধর্মঘট শুরু করেছেন। পদত্যাগ করেছেন একজন চিকিৎসক। তরুণ ও শিক্ষার্থীরা অসহযোগ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন। এ ছাড়া ইয়াঙ্গুনের রাজপথে বাসিন্দারা ঢাকঢোল পিটিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। এদিন সেনা অভ্যুত্থানের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাং। তিনি বলেছেন, দেশে সেনাশাসন জারি করাটা অপরিহার্য ছিল এবং আইনানুগ পথেই তা করা হয়েছে। মিয়ানমারে সরকারি হাসপাতালগুলোয় কর্মরত চিকিৎসকরা সু চির মুক্তির দাবিতে সকাল থেকে কাজ বন্ধ রেখেছেন। ৩০টি শহরে অন্তত ৭০টি হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্টাফরা এ ধর্মঘটে যোগ দেন। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে তারা মিয়ানমার সিভিল ডিজঅবিডিয়েন্স মুভমেন্ট (এমসিডিএম) গড়ে তুলেছেন। এমসিডিএম এক বিবৃতিতে বলেছে, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে জনগণ যখন কঠিন জীবনযাপন করছে তখন বিপন্ন সেই মানুষগুলোর চেয়ে নিজেদের স্বার্থ বড় করে দেখেছে সেনাবাহিনী। তাদের সব রকম নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করার ঘোষণা দিয়েছে এ গ্রুপটি। তারা সামরিক সরকারকে অবৈধ শাসক বলেও উল্লেখ করেছেন।

কিছু চিকিৎসাকর্মী নীরব প্রতিবাদ জানাতে বিশেষ প্রতীক ব্যবহার করছেন। সুরক্ষা পোশাক পরা চিকিৎসাকর্মীদের পেছনে ‘অবশ্যই স্বৈরাচারের পতন হবে’ লেখা দেখা গেছে। সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে একজন চিকিৎসক পদত্যাগও করেছেন। সাগাইং অঞ্চলে মংগিওয়া হাসপাতালের চিকিৎসক নায়িং হিতু অং বিবিসি বার্মিজকে বলেন, এ ধরনের অভ্যুত্থান আর সহ্য করা যায় না। সেনাশাসকের অধীনে আমি কাজ করতে পারব না। তাই আমি পদত্যাগ করেছি। সেনাশাসক দেশের ও জনগণের কথা ভাবে না। পদত্যাগ করেই আমি তাদের উপযুক্ত জবাব দিয়েছি।

আরেক চিকিৎসক মিয়ো থেট বলেন, আমরা স্বৈরশাসক ও অনির্বাচিত সরকার মেনে নিতে পারি না। তারা যে কোনো সময় আমাদের আটক করতে পারে। আমরা সবাই হাসপাতালে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত মিয়ানমারের পরিস্থিতি ছিল শান্ত। প্রধান শহরগুলোয় সেনাবাহিনীর টহল চলেছে। তবে বুধবার রাতে ইয়াঙ্গুনে বিক্ষোভকারীরা ঢাকঢোল, গাড়ির হর্ন, থালা-বাসন ও হাঁড়ি-পাতিল বাজিয়ে প্রতিবাদ করেন। বিক্ষোভকারীরা ‘অমঙ্গল দূর হবে’ বলে স্লোগান দেন। মিয়ানমারের তরুণ ও শিক্ষার্থীরা অসহযোগ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন। ফেসবুক পেজে তাদের এ কর্মসূচিতে এক লাখেরও বেশি লাইক পড়েছে।

অফলাইন মেসেজিং অ্যাপ ব্রিজফি জানিয়েছে, মিয়ানমারে তাদের অ্যাপটি ১০ লাখ বারের বেশি ডাউনলোড হয়েছে। দেশজুড়ে ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বিঘ্নিত হওয়ার সমাধান হিসাবে দেশটির আন্দোলনকারীরা ব্রিজফির ডাউনলোড উৎসাহিত করে।

মিয়ানমারের ক্ষমতা এখন সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের হাতে। বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্রসহ ১১ জন মন্ত্রী ও উপমন্ত্রীকে বদলানো হয়েছে। মিয়ানমারে নতুন নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ প্রধান নিয়োগ করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। রাজধানী নেপিদোতে শতাধিক পার্লামেন্ট সদস্যকে আবাসিক বাসভবনে মঙ্গলবার পর্যন্ত অবরুদ্ধ করে রাখে সেনাবাহিনী। বুধবার তাদের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করেছে। এনএলডি নভেম্বরের নির্বাচনের ফল মেনে নিতে সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। মিয়ানমারে নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে সু চির দল এনএলডি ৮৩ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছে। পার্লামেন্টের ৪৭৬টি আসনের মধ্যে সেনাসমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি পায় মাত্র ৩৩টি আসন। এ নির্বাচনের ফল ঘিরে সংকট ঘনীভূত হয়। সেনাবাহিনী ও ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি নির্বাচনের পর থেকেই ভোটে কারচুপির অভিযোগ তোলে। কিন্তু দেশটির নির্বাচন কমিশন এ অভিযোগ নাকচ করে। সোমবার মিয়ানমারের নবনির্বাচিত পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন বসার কথা ছিল। তার কয়েক ঘণ্টা আগে দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে।

মিয়ানমারে রাজনীতিকদের আটক ও সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্বনেতারা। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা-সংগঠনও এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে যুক্তরাজ্য সরকার। মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করবে বলে হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল আগে থেকেই। সু চি তাই অভ্যুত্থানের আগেই চিঠি লিখে রেখেছেন। আটকের আগে সু চির লেখা একটি চিঠি তার দলের চেয়ারপারসন ফেসবুকে পোস্ট করেন। তাতে অভ্যুত্থান মেনে না নিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

মুখ খুললেন সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাং : মিয়ানমারে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে জরুরি অবস্থা জারির প্রসঙ্গে প্রথমবারের মতো মুখ খুলেছেন দেশটির সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাং। অভ্যুত্থানের পক্ষে সাফাই গেয়ে তিনি বলেছেন, দেশে সেনাশাসন জারি করাটা অপরিহার্য ছিল এবং আইনানুগ পথেই তা করা হয়েছে। মঙ্গলবার সেনা সদস্যদের নিয়ে গঠিত মন্ত্রিপরিষদে দেওয়া বক্তব্যে এমন দাবি করেন তিনি। বৈঠকে সেনাপ্রধান দাবি করেন, আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই সেনাবাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। নির্বাচনে জালিয়াতিসংক্রান্ত অভিযোগগুলো মোকাবিলা করতে সরকার ব্যর্থ হওয়ায় তাদের ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। ‘অনেক অনুরোধের পরও সরকার সাড়া দেয়নি। এমন অবস্থায় দেশের জন্য এটা (অভ্যুত্থান) অপরিহার্য ছিল। আর সে কারণে আমরা সে পথই বেছে নিয়েছি।

আপনার মন্তব্য লিখুন...