সিলেটে সাবেক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে ৫১ মাস ধরে বাসাভাড়া না দেওয়ার অভিযোগ
অনলাইন ডেস্কঃ
প্রকাশিত: ০৬:০৩ পিএম, সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩ আপডেট: ০৬:০৩ পিএম, সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩
সিলেট নগরের শাহজালাল উপশহরে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ৫১ মাস ধরে বাসাভাড়া না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শামীম ইকবাল নামের যুবলীগের সাবেক এক নেতার বিরুদ্ধে। শামীম ইকবাল সিলেট জেলা যুবলীগের সাবেক সদস্য। বর্তমানে জেলায় যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই।
সোমবার দুপুরে সিলেট প্রেসক্লাব ও জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন ওই বাসার মালিক দাবি করা নেহারুন বিবি (৬০) নামের এক নারী। শাহজালাল উপশহরের ডি ব্লকের ১৪ নম্বর সড়কের ২৬ নম্বর বাসার মালিক তিনি। নেহারুন বিবি অভিযোগ করেন, বকেয়া ভাড়া চাওয়ায় বাসার ছাদ থেকে ফেলে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শামীম ইকবাল। ওই বাসা ভাড়া নিতে অগ্রিম ১০ লাখ টাকা দিয়েছেন দাবি করে তিনি বাংলারসময়কে বলেন, ‘বাসাটি মেরামত বাবদও ৯ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তবে বাসার মালিক দাবি করা ওই নারী এ ব্যাপারে কোনো চুক্তি করেননি। চুক্তি করার জন্য বললে বিভিন্নভাবে টালবাহানা করেন। পরে জানতে পারি, ওই ভবনটি মালিকানা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। ওই নারীর স্বামীর ভাই ও বোনেরা বাসাটিতে তাঁদের অংশ রয়েছে বলেও দাবি করছেন। বাসাটির মালিক দাবিদার অন্যরা ওই নারীর কাছে ভাড়া দিতে নিষেধ করেছেন। এ জন্য আমি চলতি বছরের শুরুতে রেন্ট কন্ট্রোল অ্যাক্টে আদালতে মামলা করেছি।’
শামীম ইকবালের আইনজীবী সিরাজ আহমদ বলেন, আদালতে শামীম ইকবাল মামলা করে ভাড়া জমা দিচ্ছেন। এখন আদালতই বলে দেবেন ভাড়া কার প্রাপ্য। শামীম ইকবাল আগে জেলার সদস্য ছিলেন এবং পরে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উল্লেখ করে সিলেট জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন আয়োজনে শামীম ইকবালকে হাজির হতে দেখা যায়। বাসাভাড়া না দেওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবহিত নন। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নেহারুন বিবি বলেন, ‘যুবলীগের বড় নেতা পরিচয় দেওয়া শামীম ইকবালের কারণে আমার ও আমার সন্তানদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। তাঁকে বাসা ভাড়া দিয়ে এখন বিপদে পড়েছি। আমার পাওনা টাকা চাইতে গেলে তিনি উল্টো আমাকে ও আমার ছেলেমেয়েকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শামীম ইকবাল ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ ‘অটিজম গবেষণা ও প্রতিবন্ধী স্কুল’–এর জন্য মাসিক ২৫ হাজার টাকা ভাড়া প্রদানের শর্তে পাঁচতলা ওই ভবনের নিচতলা ভাড়া নেন। ওই সময়ে নানা কারণে চুক্তি করা হয়নি। পরে চুক্তি সম্পাদনের কথা বললে শামীম ইকবাল সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন।
নানাভাবে চতুরতার আশ্রয় নিয়ে চুক্তির বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি। প্রথম দিকে কয়েক মাস ঠিকঠাক ভাড়া দেন তিনি। এরপর বিভিন্ন অজুহাতে ভাড়া বকেয়া করতে থাকেন।
লিখিত বক্তব্যে নেহারুন বিবি বলেন, শুধু ভাড়ার টাকাই নয়, ২০২২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি শামীম ইকবাল তাঁর কাছে ৪০ হাজার টাকা ধার চেয়ে তা বকেয়া ভাড়ার সঙ্গে পরিশোধের আশ্বাস দেন। তিনি ধার দিলে ওই টাকাও ফেরত দেননি শামীম। বারবার অনুরোধের পরও বাসাভাড়া বাবদ পাওনা টাকা না দিলে ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে শামীম ইকবালকে উকিল নোটিশ পাঠানো হয়। এতেও তিনি ভ্রুক্ষেপ করেননি।
বয়স্ক এই নারী বলেন, ‘বকেয়া টাকা আদায়ের ব্যাপারে আমি স্থানীয় মুরব্বিদের সহযোগিতা চেয়েও ব্যর্থ হয়েছি। একাধিকবার সালিস বসানোর চেষ্টা করলেও তিনি বিচার মানতে রাজি হননি। বরং শামীম ইকবাল মুরব্বিদের কাছে দাবি করেন, আমাকে অগ্রিম ১৫ লাখ টাকার চেক দিয়েছেন। এর প্রমাণ চাইলেও তিনি তা দেখাতে ব্যর্থ হন।’
টাকা না দিয়ে উল্টো শামীম ইকবাল ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন ও হত্যার হুমকি দিচ্ছেন অভিযোগ করে নেহারুন বিবি বলেন, ‘২২ মার্চ শামীম ইকবাল আমার বাসার ছাদে এলে, তাঁর কাছে ধারের ও ৫১ মাসের বকেয়া ভাড়া বাবদ ১৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা চাই। এ সময় তিনি আমাকে অশালীন ভাষায় গালাগাল করেন এবং মারধর করতে উদ্যত হন। আমার ছেলে ফয়েজ আহমদ ও গৃহকর্মী তামান্না সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আমার পাঠানো লিগ্যাল নোটিশ প্রত্যাহার না করলে ছাদের ওপর থেকে মাটিতে ফেলে হত্যার হুমকি দেন শামীম। এসব বিষয়ে মামলা করলে আমার ছেলেমেয়েদের খুন করে লাশ গুম করারও হুমকি দেন তিনি।’ এ ঘটনায় শাহপরাণ থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।
পাওনা টাকা উদ্ধার, শামীম ইকবালকে বাসা থেকে নামিয়ে দেওয়া এবং পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংবাদ সম্মেলনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছেন নেহারুন বিবি। তাঁর ছেলে আলী আকবর ফয়েজ বলেন, শামীম ইকবালকে উকিল নোটিশ দেওয়ার পর তিনি আদালতে মামলা করেছেন। শামীম ইকবালসহ পাঁচতলা ভবনের ভাড়াটেদের সবাই তাঁর মায়ের মাধ্যমে বাসা ভাড়া নিয়েছেন। অন্য ভাড়াটেরা ঠিকমতো ভাড়া দিলেও তিনি দিচ্ছেন না।
জায়গা নিয়ে স্বজনদের সঙ্গে নেহারুন বিবির উচ্চ আদালতে মামলা চলছে স্বীকার করে আলী আকবর ফয়েজ বলেন, ভবনটি নেহারুন বেগম ভোগদখল করে আসায় শামীম ইকবালের ভাড়াও তাঁর মায়ের প্রাপ্য। কিন্তু তিনি এতে বিভিন্ন বিষয় টেনে আনছেন। ভাড়া নেওয়ার জন্য অগ্রিম ১০ লাখ টাকা দেওয়ার বিষয়টিও বানোয়াট।