ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪  |  Friday, 19 April 2024  |  এখন সময়:

Advertise@01680 34 27 34

ভারত সরকারকে তার চাষিদের বাঁচাতেই হবে


অনলাইন ডেস্কঃ

প্রকাশিত:   ০৭:০১ পিএম, মঙ্গলবার, ৪ জানুয়ারী ২০২২   আপডেট:   ০৭:০১ পিএম, মঙ্গলবার, ৪ জানুয়ারী ২০২২  
ভারত সরকারকে তার চাষিদের বাঁচাতেই হবে
ভারত সরকারকে তার চাষিদের বাঁচাতেই হবে

ভারতে এক বছরের বেশি সময় ধরে কৃষকেরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন গত ১৯ নভেম্বর বাতিল করেছেন। মূলত কৃষকদের জন্য ভর্তুকির বরাদ্দ বাতিল এবং কৃষিপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতেই এই আইন পাস করা হয়েছিল। সরকারের দিক থেকে বলা হয়েছিল কৃষি খাতের ‘আধুনিকীকরণ’ নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এতে একদিকে অনিবার্যভাবে লাখ লাখ দরিদ্র কৃষক সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হতেন, অন্যদিকে বড় বড় বেসরকারি খাত ও আন্তর্জাতিক কোম্পানি সরকারের আনুকূল্য ও আর্থিক ছাড় উপভোগ করত। অনিবার্য ফল হিসেবে বৈষম্য আরও বেড়ে যেত।

এই ক্ষতিকর আইনগুলো পাস করার পেছনে পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ ছিল। তারা ভারতে তাদের পুঁজিবাদী অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য কৃষকদের অতিদারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিতে চাইছিল। এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত চাপ থেকে কৃষক সম্প্রদায়কে যাতে রক্ষা করা যায়, সে জন্য ভারত সরকারের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নীতির বাস্তবায়ন জরুরি। যে মুহূর্তে ভারত সরকার বিক্ষোভের মুখে কৃষি আইন বাতিল করেছে, সে মুহূর্তে দেশটির অসংখ্য কৃষক দুই বেলা দুমুঠো খাবারের জন্য সংগ্রাম করছেন এবং দেনার দায়ে কৃষকদের আত্মহননের ঘটনা বেড়ে চলেছে।

বর্তমানে সরকার থেকে কৃষকদের যে ভর্তুকি দেওয়া হয়, তা দিয়ে তাঁরা কোনোরকম খেয়ে–পরে আছেন, তবে উৎপাদন খরচের তুলনায় কৃষিপণ্যের যে দাম তাঁরা পান, তা দিয়ে পর্যাপ্ত মুনাফা অর্জন সম্ভব হয় না। কৃষকেরা চান, সরকার এমন কিছু প্রবিধান প্রয়োগ করুক, যা তাঁদের উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হওয়া থেকে সুরক্ষা দেবে এবং চাষবাস থেকে একটা যৌক্তিক লাভের মুখ দেখার নিশ্চয়তা দেবে।

এ ক্ষেত্রে ভারত সরকারের জন্য একটি সমাধান হবে সারা দেশে তার কৃষিনীতিতে একটি ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) আইন প্রণয়ন করা। বর্তমানে এটি ভারতের শুধু কিছু রাজ্যে চালু আছে। গরিব কৃষকদের টেকসই কৃষি ব্যবস্থা এবং ভোক্তার জন্য পণ্যের দাম হাতের নাগালে রাখা নিশ্চিত করতে কৃষকেরা এমএসপি চালুর জন্য সরকারকে চাপ দিতে শুরু করেছেন।

তাহলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সামনে এমএসপি বাস্তবায়নে বাধাটা কোথায়? মোদির সঙ্গে যে ভারতের করপোরেট খাতগুলোর দহরম-মহরম এবং তাদের স্বার্থের প্রতি তাঁর যে প্রকাশ্য পক্ষপাত আছে, তা সর্বজনবিদিত। এর বাইরে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) এবং কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার মতো বড় বড় অর্থশালী দেশের চাপের মুখে রয়েছেন মোদি।

কয়েক দশক ধরে পশ্চিমা দেশগুলো ডব্লিউটিওর মাধ্যমে ভারতে কৃষি খাতে ভর্তুকি তুলে দেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে। ২০১৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছিল, ভারত গম এবং চালের জন্য যে এমএসপি দেয় বলে প্রতিবেদনে বলেছিল, প্রকৃতপক্ষে তার চেয়ে তারা বেশি দিয়ে থাকে। ২০১৯ সালে কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই আক্রমণাত্মকভাবে ভারতে উচ্চ মাত্রায় এমএসপি চালু রাখার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিল। আর ভারতের আখ চাষে ভর্তুকি দেওয়ার বিষয়ে অস্ট্রেলিয়া সমালোচনা করে সে বরাদ্দ কমাতে লিখিতভাবে ভারতকে অনুরোধ জানিয়েছিল। ২০২০ সালে প্যারাগুয়ের সঙ্গে কানাডা যুক্ত হয়ে অভিযোগ তুলেছিল, ভারত আন্তর্জাতিকভাবে বেঁধে দেওয়া মাত্রা লঙ্ঘন করে কৃষি খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে।

মুক্ত বাণিজ্যের সম্প্রসারণ এবং ‘বাজারের বিকৃতি’ সৃষ্টিকারী ভর্তুকি সীমিত করতে ডব্লিউটিও বিভিন্ন দেশের মধ্যে কৃষিজাত পণ্যের উৎপাদন ও কৃষি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ডব্লিউটিওর প্রবিধান অনুযায়ী উন্নত দেশ তাদের কৃষকদের উৎপাদন মূল্যের ৫ শতাংশ ভর্তুকি দিতে পারে আর উন্নয়নশীল দেশ সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ ভর্তুকি দিতে পারে। পশ্চিমা দেশের বিশাল পরিসরের কৃষি ব্যবস্থার কথা (যেমন যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে একেকটি খামারের আয়তন চার শ একর) মাথায় রেখে এসব কৃষিনীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। বড় বড় দেশে ৫ শতাংশ ভর্তুকি প্রয়োজনের চেয়েও অনেক বেশি।

অন্যদিকে ভারতে গড়ে একেকটি খামারের আয়তন মাত্র দুই একর। এখানে ১০ শতাংশ ভর্তুকি কৃষকের জন্য পর্যাপ্ত নয়। এ অবস্থায় মোদি চাইলেও দেশজুড়ে কৃষি ভর্তুকি নিশ্চিত করা কঠিন হবে। অন্যদিকে ভর্তুকি না পেলে কৃষকদের পক্ষেও টিকে থাকা মুশকিল হবে।

আল-জাজিরা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

মতামত থেকে আরও পড়ুন

সরকার ভারত কৃষক মতামত

আপনার মন্তব্য লিখুন...