ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি নিয়ে চাষি উদ্বিগ্ন
অনলাইন ডেস্কঃ
প্রকাশিত: ০৯:০৩ পিএম, বৃহস্পতিবার, ১২ মার্চ ২০২০ আপডেট: ১০:০৩ পিএম, বৃহস্পতিবার, ১২ মার্চ ২০২০
অবশেষে পেঁয়াজের দাম নাগালে এল। বড় বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিবেশী ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু করার ঘোষণা দেওয়ার পরই বাজারে দ্রুত দাম কমে গেল পণ্যটির। আগামী রোববার ভারতীয় পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
পেঁয়াজের দাম কমার মধ্য দিয়ে বাজারে মোটামুটি ছয় মাসের একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতির অবসান হলো। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ন্যূনতম মূল্য বেঁধে দেওয়ার ফলে পণ্যটির দাম বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে শুরু হয় ক্রেতাদের অস্বস্তি। ভারত সরকার নিজেদের বাজার সামাল দিতে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য টনপ্রতি ৮৫০ ডলার বেঁধে দেয়। ওই দিনই এ দেশে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১৫ টাকার মতো বেড়ে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা হয়।
এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। আর তখন থেকেই দেশে পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। একসময় দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ২৫০ টাকায় উন্নীত হয়।
এদিকে ভারত গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয়, যা কার্যকর হবে আগামী রোববার। এ ঘোষণার পর থেকেই দেশে দাম কমতে থাকে। অবশ্য এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। তাঁরা বলছেন, এখন নতুন মৌসুমের হালি পেঁয়াজ (সংরক্ষণ করা যায়) উঠতে শুরু করেছে। এই সময়ে দেশে ভারতীয় পেঁয়াজ আসলে দাম একেবারেই পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
জানতে চাইলে ফরিদপুরের বুরাইছ ইউনিয়নের শৈলমারি সিআইজি ক্লাব নামের একটি কৃষক সংগঠনের সভাপতি কাজী সামসুজ্জামান জানান, ‘এবার চাষিরা প্রচুর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। যখন তাঁরা আবাদ শুরু করেন, দাম অনেক চড়া ছিল। এখন যখন পেঁয়াজ উঠছে, তখন দাম কমে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছের এক বাজারে পেঁয়াজ এখন ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।’
পুরান ঢাকার পাইকারি মোকাম শ্যামবাজারে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৩০ টাকার আশপাশে বিক্রি হয় বলে জানান সেখানকার ব্যবসায়ী আবদুল মাজেদ। তিনি বলেন, দেশের কৃষককে সুরক্ষা দিতে হলে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানিতে কর বসানো উচিত।
পেঁয়াজ নিয়ে সংকটকালে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি একাধিকবার কৃষককে সুরক্ষা দেওয়ার কথা বলেছিলেন। তিনি জানান, তিন বছরের মধ্যে সরকার পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চায়। এ জন্য মৌসুমের সময় আমদানি নিয়ন্ত্রণের চিন্তা রয়েছে সরকারের।
ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে সেই দেশে দাম কমার পর। সেখানকার কৃষকেরা দাম কমে যাওয়ার কারণে বিক্ষোভও করেছেন। ভারতীয় পত্রিকা টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক খবরে গত বুধবার বলা হয়, দেশটির মহারাষ্ট্রের নাসিকে গ্রীষ্ম মৌসুমের পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। নাসিকের পেঁয়াজের বড় পাইকারি বাজার লাসালগাঁওয়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ সর্বনিম্ন ১০ রুপি ও সর্বোচ্চ ১৯ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে।
ঢাকার কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষকের খরচ হবে ১২ টাকার মতো। ফলে এখনকার দরও কৃষকের জন্য লাভজনক। চিন্তার বিষয় হলো, ভারতীয় পেঁয়াজ এলে দাম আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। জানতে চাইলে ট্যারিফ কমিশনের সদস্য আবু রায়হান আল বেরুনি গত রাতে জানান, বিষয়টি এখনো প্রকাশযোগ্য নয়। ভারতীয় পেঁয়াজ রোববার আসছে জানালে তিনি বলেন, ‘আমরাও সতর্ক আছি।’
সরকার সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়ে কী ভাবছে, জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব মো. জাফর উদ্দীন জানান, ‘আমরা আলোচনা করছি। মানুষের ক্ষতি হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত আমরা নেব না।’