পরীক্ষার হলে প্রিলির কাট মার্ক নির্ধারণে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিবেন যেভাবে
অনলাইন ডেস্কঃ
প্রকাশিত: ০২:০৪ এএম, বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল ২০১৯
৩৫ তম বিসিএস ইতিহাসে একটু ভিন্নরকম বিসিএস ছিলো। ২০০ নম্বরের কঠিন প্রিলি, লো কাট মার্ক, আবার রিটেনে বাংলাদেশ, গণিত, বাংলা ইত্যাদি প্রশ্নে ভিন্নতা ছিলো। ৩৬ প্রিলি সে সাপেক্ষে অনেক সাধারণ মানের হয়েছে। সুতরাং সাধারণ এবং অসাধারণ দুই ধরনের মানসিক প্রস্তুতি ই আপনাকে নিয়ে রাখতে হবে এবং পরীক্ষার হলে কিছু সিদ্ধান্ত তখন ই নিতে হবে যেটার জন্য আপনার প্রস্তুতি নেই। আমার ৩৫ এর যাত্রা থেকে সে ধরনের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। লেখক: শেখ এহসান সৌরভ:
প্রথমে প্রিলি। আপনার দুর্বলতা আর সবলতা আপনি ই ভালো জানেন। এটাকে মেনে নিন। যেমন আমি গণিতে সবল ছিলাম। আর বাকী সব দূর্বল। পড়তে পড়তে বাকীগুলোতে সবল হয়েছি, ইংরেজীতে বাচ্চাদের মত গ্রামার শিখেছি এক ভাইয়ার কাছে, লজ্জা পাইনি। কারণ আপনি অনেক কিছু টাচে না থাকলে ভুলে যেতেই পারেন। এখন যখন আপনি ৩৫ এর মত একটা প্রশ্ন হাতে পাবেন আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না যে ৮০-৮৫ কাট মার্ক হতে পারে। দেখা যাচ্ছে অনেকে বেশী উত্তর করে ৩৫ এ ধরা খেয়েছে আবার ৩৫ এর শিক্ষা নিয়ে ৩৬ এ কম উত্তর করে ধরা খেয়েছে। এক্ষেত্রে পরীক্ষার হলে আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ খুবি জরুরী।
প্রশ্ন যে মানের ই হোক না কেনো, কোচিং এ যে যতই পাক না কেনো বিসিএস এর ইতিহাসে ১৩০ মার্কস মোটামুটি সিকিউর বলে ধরে নেয়া যায়।( প্রশ্ন একেবারে ডালভাত না হলে)। প্রথমেই ১৩০ এর উপরে পাওয়ার চেষ্টা করুন খুব ই কম ভুল করে। এটা করতে না পারলে প্ল্যান বি বা সি তে যান। ৩৫ এর প্রশ্নে ১ ঘন্টা ১০ মিনিটে মাত্র ১১৭ টা দাগিয়েছিলাম। এটুকুতেই আমি টিকতাম। কিন্তু কোচিং কে অনুসরণ করতে গিয়ে আরো দাগানো শুরু করলাম। ১৪৫ টা দাগিয়ে ক্ষান্ত হলাম। ফলাফল পজিটিভ হলেও মাইনাস মার্কিং আমাকে ভালোই কাদিয়েছিলো। ৩৫ এর মত প্রশ্নে ১৭০-১৮০ টা দাগানো অবান্তর। আর যখন আপনার ক্যাপাসিটি শেষ হয়ে যাবে আপনি চিন্তা করবেন এই প্রশ্নে কতটুক হলে আপনার হয়ে যাবে। ধরুন আপনার ১০ নম্বর পিছিয়ে আছেন মনে হচ্ছে। তখন যে সব সাবজেক্টে আপনি সবল ওইগুলোর না দাগানো প্রশ্নে যান।
প্রথমে লজিকাল ইলিমিনেশান শুরু করুন। অপশন কমিয়ে দুই টিতে আনতে পারলে আমি মনে করি আপনার দাগানো উচিত। আর যেটি একেবারেই অপরিচিত প্রশ্ন সেটিতে হাত দিবেন না। এভাবে ১০ নম্বর পাওয়ার জন্য আপনি ২০ টি উত্তর এটেম্পট করতে পারেন কিন্তু অবশ্য ই লজিকালি। আশপাশের যা জানবেন প্রিলিতে তার সব ই ভুল হবার চান্স ৯০%. নিজের উপর আস্থা রাখুন। আমার প্রিলিতে মার্কস ছিলো ৯৫ (যার মাঝে গণিতেই ২৮। চিন্তা করুন বাকীগুলোর অবস্থা) কিন্তু ৩৬ এ এমন মার্কস এ আপনি কিছু আশা করতে পারেন না। তাই বুঝার চেষ্টা করুন প্রশ্নের প্যাটার্ন।
রিটেন এ আমি গণিতে অহংকারী ছিলাম। বিজ্ঞানে ও ইংরেজীতে সবল ছিলাম। দুর্বল ছিলাম সংবিধান (প্রিলিতে বাদ ই দিয়েছিলাম) ,আর বাংলা তে। বহুদিন বিতর্ক করার সুবাধে বাংলাদেশ, আর্ন্তজাতিক এ কন্সেপ্ট ভালো ছিলো। পড়তে পড়তে দূর্বল পার্ট আবারো সবল করলাম। কিন্তু এবার অহংকারের পতন হলো। গণিতে মাত্র ৭ টা পারলাম, সেটার প্রভাব গিয়ে পড়ল মানসিক দক্ষতা তে। সেখানে পেলাম ৪০+। অনেকে ৮-৯-১০ টা পেরেছে। মাথা পেতে নিলাম।বুঝতে পারলাম কোটাহীন পরীক্ষায় আমার পিছিয়ে পড়া নিশ্চিত।
ঘুরে দাড়ালাম আর্ন্তজাতিক আর বিজ্ঞানে। বাংলায় ভাগ্যক্রমে এমন কিছু জিনিস কমন পেলাম যেগুলো আমাকে এগিয়ে দিয়েছিলো। এই বাংলা পরীক্ষাতেই আমার ৪ পৃষ্ঠা কেটে আবার লিখতে হয়েছিলো কারণ আমি একি খাতায় ১ম ও ২য় পত্র উত্তর করছিলাম। ২০ মিনিট লস কাভার দেয়া আমার জন্য সহজ ছিলো না। আমার পেছনের জন ম্যাথ পরীক্ষার পর বাংলা ২য় আর বিজ্ঞান পরীক্ষা দেয়নি আশাহত হয়ে। বাংলাদেশ বিষয়ে অনেকে আমার চাইতে অনেক ভালো জানলেও ৪০ টা প্রশ্ন উত্তর করতে হবে এটা নিয়ে মানসিক প্রস্তুতি না থাকায় পরীক্ষার হলে তাই পিছিয়ে পড়েছে।
একথা গুলো বলার মানে হলো, আপনার প্রস্তুতি যেমন ই হোক না কেনো পরীক্ষার হল আর প্রশ্নপত্র আপনাকে কিছু চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিবে। এই চ্যালেঞ্জ গুলো ঠিকভাবে উত্তরণ করতে যে পারবে সে ই ক্যাডার হবে। মাঝপথে হেরে যাবেন না, সিদ্ধান্ত গ্রহণে কৌশল অবলম্বন করুন।
লেখক:শেখ এহসান সৌরভ, ৩৫ তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার ।