ঢাকা, সোমবার ১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৭ | এখন সময়:

Advertise@01680 34 27 34

ধনী ও উচ্চবিত্তদের মধ্যেই সুচিকিৎসা সীমাবদ্ধ: হাইকোর্ট


অনলাইন ডেস্কঃ

প্রকাশিত:   ০৩:১১ এএম, বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৩   আপডেট:   ০৩:১১ এএম, বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৩  
ধনী ও উচ্চবিত্তদের মধ্যেই সুচিকিৎসা সীমাবদ্ধ: হাইকোর্ট
ধনী ও উচ্চবিত্তদের মধ্যেই সুচিকিৎসা সীমাবদ্ধ: হাইকোর্ট

উন্নত ও সুচিকিৎসা কেবল দেশের ধনী ও উচ্চবিত্তদের মধ্যেই সীমিত বলে এক রায়ে উল্লেখ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, মধ্য ও নিম্নমধ্যবিত্তসহ দেশের সাধারণ জনগণ বলতে গেলে উন্নত চিকিৎসা ও সুচিকিৎসা হতে বঞ্চিত। কেবল নামমাত্র সামান্য চিকিৎসাসেবা পান তাঁরা।

ভেজাল ওষুধ সেবনে ১৯৯১ ও ২০০৯ সালে প্রাণ হারানো মোট ১০৪ শিশুর পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদালতের এ পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে।

বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও রাজিক–আল–জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বছরের ২ জুন এ রায় দেন। বুধবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়।

রায়ে আদালত বলেছেন, জনগণের করের টাকায় সাংবিধানিক পদধারী ব্যক্তিরাসহ সামরিক ও বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বিদেশে হামেশাই সরকারি অর্থে উন্নত চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। এমনকি চিকিৎসার জন্য প্রায় সব রাজনৈতিক দলের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের বিদেশে যেতে দেখি। কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষের বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার মতো ন্যূনতম কোনো সুযোগ নেই।

রায়ে বলা হয়, বিনা মূল্যে সব চিকিৎসাসুবিধা না পেলে ব্যক্তি তাঁর জীবন তথা বেঁচে থাকার সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে বাধ্য। সুতরাং প্রত্যেকের বিনা মূল্যে সব ধরনের চিকিৎসাসুবিধা পাওয়া তাঁর সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার তথা বেঁচে থাকার অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।

রায়ে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের মালিক এই দেশের প্রতিটি নাগরিক। বিনা মূল্যে চিকিৎসাসুবিধা না পাওয়ায় সেই নাগরিকের জীবন হুমকির সম্মুখীন। আদালত বলেছেন, বিনা মূল্যে ভেজালমুক্ত তথা নির্ভেজাল ওষুধ পাওয়া নাগরিকের সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার।

৮ দফা আদেশ–নির্দেশনা

হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদেশ, নির্দেশনাসহ দফা আছে আটটি। দ্বিতীয় দফায় বলা হয়, ওষুধে ভেজাল মিশ্রণ বন্ধে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন ২৫ (সি) অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য প্রতিপক্ষদের (মামলার বিবাদীদের) প্রতি নির্দেশ দেওয়া হলো।

তৃতীয় দফায় বলা হয়, ১৯৯১ সালে ৭৬ ও ২০০৯ সালে ২৮ শিশুর মৃত্যুর জন্য ঔষধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষ চরমভাবে দায়ী। চতুর্থ দফায় বলা হয়, এসব শিশুর পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য ঔষধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হলো। (ঔষধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষ ওই ক্ষতিপূরণের টাকা সংশ্লিষ্ট দায়ী ব্যক্তি, ওষুধ কোম্পানি থেকে আদায় করতে ‘হকদার’ হবেন)।

হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের অপর একটি দফায় বলা হয়, একটি স্বাধীন জাতীয় ভেজাল ওষুধ প্রতিরোধ কমিটি গঠনের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের আদলে দেশের জনগণের জন্য চিকিৎসাসেবা অবকাঠামো তৈরি করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে হাইকোর্টের রায়ে।

ঘটনার পূর্বাপর

অ্যাডফ্লেম ফার্মাসিউটিক্যালসের ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবনে ১৯৯১ সালে ৭৬ শিশুর মৃত্যু হয়। এ ঘটনার সংবাদ প্রতিবেদন যুক্ত করে ২০১০ সালে একটি রিট করা হয়। ওষুধে ভেজাল রোধ ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করেছিল হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৩ নভেম্বর হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন।

২০০৯ সালে রিড ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবনে মৃত্যু হয় ২৮ শিশুর। এ ঘটনায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক মো. শফিকুল ইসলাম ঢাকার ড্রাগ আদালতে প্রতিষ্ঠানটির মালিকসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর আদালত রিড ফার্মাসিউটিক্যালসের মালিকসহ পাঁচ কর্মকর্তাকে বেকসুর খালাস দিয়ে রায় দেন। যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে তৎকালীন ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক শফিকুল ইসলাম ও মো. আলতাফ হোসেন চরম অবহেলা, অযোগ্যতা ও অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন বলে রায়ে অভিমত দেওয়া হয়।

এরপরও ওই দুই কর্মকর্তার দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার বৈধতা নিয়ে ২০১৬ সালে সম্পূরক আবেদন করা হয়। শুনানি নিয়ে সম্পূরক রুলসহ দুই কর্মকর্তার বিষয়ে আদেশ দেওয়া হয়। রুল ও সম্পূরক রুলের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট ওই রায় দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী রিপন বাড়ৈ। শফিকুল ইসলাম ও আলতাফ হোসেনের পক্ষে তখন শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী সাইফুদ্দিন খোকন।

বাংলাদেশ থেকে আরও পড়ুন

বাংলাদেশ চিকিৎসা হাসপাতাল আদালত ওষুধ হাইকোর্ট আইন ও আদালত আইন ও বিচার

আপনার মন্তব্য লিখুন...