ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪  |  Thursday, 28 March 2024  |  এখন সময়:

Advertise@01680 34 27 34

দেশের অর্জন ধরে রাখতে নৌকায় ভোট চাই


অনলাইন ডেস্কঃ

প্রকাশিত:   ১২:০৪ এএম, বৃহস্পতিবার, ১২ এপ্রিল ২০১৮    
দেশের অর্জন ধরে রাখতে নৌকায় ভোট চাই
দেশের অর্জন ধরে রাখতে নৌকায় ভোট চাই

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের এই অর্জনটা ধরে রাখতে পারব যদি দেশের জনগণ নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ডিসেম্বরের নির্বাচনে নৌকায় মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের জয়যুক্ত করে।

যদি ক্ষমতার পরিবর্তন হয়, বিএনপি-জামায়াত জোট বা অন্য কেউ ক্ষমতায় আসলে উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারবে না। পারবে একমাত্র আওয়ামী লীগ, এটা আমরা প্রমাণ করেছি।

স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার দশম জাতীয় সংসদের ২০তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সংসদের বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদও সমাপনী বক্তব্যে অংশ নেন।

প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, আগামী নির্বাচনে আমরা যদি সরকার গঠন করে দেশ সেবার সুযোগ পাই আর এই অর্জনটা যদি ধরে রাখতে পারি তাহলে আগামী ৬ বছরে উন্নয়নশীল দেশ অবশ্যই অর্জন করবই। তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে আমাদের পরিকল্পিতভাবে কাজ করতে হয়েছে। যে তিন শর্ত পূরণ করলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়া যায় আমরা সেই তিনটি শর্তই পূরণ করেছি। শুধু শর্ত পূরণ নয়, আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। আর যতটুকু এগিয়ে আছি তাতে আগামী ৬ বছরে যতটুকু অর্জন করতে হবে সেটা আমরা এর মধ্যেই পূরণ করে ফেলেছি। কাজেই আগামী ৬ বছরেও কখনও হিসাব-নিকাশে আমাদের পেছনে ফেলতে পারবে না। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাবই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে এবং স্বাধীনতার সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে চাই। সবসময়ই আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিল দেশের মানুষের হাসি ফোটাতে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ করা। যখনই সরকার গঠন করেছি তখনই জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করেছি। নিজে কী পেলাম কখনও সেই হিসাব করিনি, করিও না। হিসাব করি মানুষ কতটুকু পেল, সেটাই আমার কাছে সবচেয়ে বিবেচ্য বিষয়। বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। এ অর্জনের জন্য আমাদের অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। এ অর্জনের জন্য আমাদের পরিকল্পিতভাবে কাজ করতে হয়েছে। আমরা তিনটি শর্তই পূরণ করেছি এবং অনেক এগিয়ে আছি। আগামী ৬ বছরে যে অর্জন করতে হবে, সেই অর্জনও আমরা করে ফেলেছি। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এই অর্জনকে আরও এগিয়ে নিতে পারব, যদি ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে। দেশের জনগণের ওপরই আমরা সবকিছু ছেড়ে দিয়েছি। জনগণ যদি ভোট দেন তাহলে আমরা ক্ষমতায় আসব। আর এটাও বলতে চাই আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে শর্তগুলো পূরণে এমন পর্যায়ে করে দিয়েছি যদি আমরা না আসি, অন্য কেউ ক্ষমতায় আসে তারা এটাকে ধ্বংস করতে না চান বা এই উন্নয়নের ধারাটাও অব্যাহত রাখতে পারে তাহলে কিন্তু আমাদের কেউ পেছনে হঠাতে পারবে না। তবে এখানে আমাদের সন্দেহ আছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের কথা উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে আমাদের সকল গৃহীত বেশিরভাগ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ একে একে বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা দেশকে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা করে রেখে এসেছিলাম। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর আবারও দেশ খাদ্য ঘাটতির দেশে পরিণত হয়। বিদ্যুত উৎপাদন, সাক্ষরতার হার কমিয়েছে। যদি ক্ষমতার পরিবর্তন হয়, বিএনপি-জামায়াত জোট বা অন্য কেউ আসলে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারবে না, পারবে একমাত্র আওয়ামী লীগ। আমরা তা প্রমাণ করেছি।

সংসদ নেতা বলেন, অতীতে সংসদে যে নোংরামি হতো, সেটি অবস্থা আজ নেই। বিরোধী দল এখন সংসদে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখছে। সত্যিকারের পার্লামেন্ট প্রাকটিস এখনই হচ্ছে। যারা ক্ষমতাকে ভোগ-বিলাস ও নিজেদের ভাগ্য গড়ার কাজে লাগায় তারা কোনদিন দেশকে কিছু দিতে পারেনি, দিতেও পারবে না। একমাত্র আওয়ামী লীগই দেশকে উন্নয়ন-অগ্রগতি দিতে পারে আমরা তা প্রমাণ করেছি। দেশের একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না, প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার আমরা পূরণ করব। বর্তমান সরকারের সময় প্রায় দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান করেছি, ১০ লাখ জনশক্তি আমরা রফতানি করছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করছি, যার ফল দেশের মানুষ পাচ্ছে। দেশে রফতানি ও বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধি করেছি। দেশের প্রত্যেক মানুষ এখন বলছে আমরা ভাল আছি। বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে কাজ করে যাচ্ছি। আজ উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছি। তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থাকলে ঋণ পেতে অনেক শর্ত দেয়া হতো। উন্নয়নশীল দেশ হওয়ায় আমাদের কেউ শর্তের বেড়াজালে বাঁধতে পারবে না, কারণ আমাদের সেই মর্যাদা আমরা অর্জন করেছি। বাজেটের ৯০ ভাগ আমরা নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছি। কারোর কাছে আমাদের হাত পেতে হয় না। আমরা অন্তর দিয়ে মানুষের জন্য কাজ করি, মানুষ ভাল আছে কি না সেটাই আমার মূল লক্ষ্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আশীর্বাদ দেশের মানুষের প্রতি আছে বলেই আমরা এ অর্জন করতে পেরেছি।

তিনি বলেন, আমার ধন্যবাদ পাওয়ার কিছু নেই। এটা ছিল আমার কর্তব্য। মানুষের কল্যাণ, ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারব, সেটাই আমার লক্ষ্য। বরং দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানাই, কারণ ভোট দিয়ে আমাদের দেশ সেবার সুযোগ দিয়েছে বলেই বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে পেরেছি। আমাদের এ অর্জন জনগণের প্রতি উৎসর্গ করেছি। কারণ তারা আমাদের প্রতি আস্থা-বিশ্বাস রেখেছে। ১৬ কোটি জনগণকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারে না, আমরা তা প্রমাণ করেছি। অনেক ষড়যন্ত্র, বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়েই আমরা এ অর্জন আনতে পেরেছি। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বিশ্বের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে পারব ইনশাল্লাহ। যে আকাক্সক্ষা নিয়ে জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন, কোন শক্তিই এই স্বাধীনতাকে নস্যাত করতে পারবে না। বাঙালী জাতিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।

সমাপনী বক্তব্যে অংশ নিয়ে বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, রাজধানী ঢাকাকে তিলোত্তমা শহর করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু হয়েছে আবর্জনার শহর। রাজধানীতে আবাসিক এলাকা বলে কিন্তু কিছু নেই। বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে অপরিকল্পিত শহর হচ্ছে এখন ঢাকা। সেবাখাতগুলো যদি সমন্বিতভাবে কাজ করতো তবে জনগণকে এ দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। যানজটের কারণে প্রায় প্রতিদিনই ঢাকা থাকে স্থবির। যানজট থেকে যদি ঢাকাকে মুক্ত করা যেত, তবে প্রবৃদ্ধি আরও অনেক বৃদ্ধি পেত। এভাবে চললে দ্রুত ঢাকাকে পরিত্যক্ত নগরী ঘোষণা করতে হবে। এর থেকে উত্তরণে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করে সমাধান করতে হবে।

তিনি বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাত এখন নড়বড়ে হয়ে গেছে, খেলাপী ঋণ বেড়ে গেছে। ছাতার মতো বেসরকারী ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ার কারণে অনেকগুলোই এখন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। ব্যংকগুলোতে নৈতিকতার সংকট প্রকট আকারে পরিণত হয়েছে, ব্যাংকগুলো এখন পরিবারতন্ত্রে পরিণত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকির দুর্বলতার কারণেই এসব হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস এখন ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যতে প্রশ্নফাঁস না হয় সেজন্য শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। আর ১৬ কোটি জনগণের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করাও আমাদের সামনে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। উন্নয়নশীল দেশ অর্জনের সফলতা ধরে রাখতে হলে অবশ্যই এসব সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান করতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন...