Oops! It appears that you have disabled your Javascript. In order for you to see this page as it is meant to appear, we ask that you please re-enable your Javascript!
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৩  |  Thursday, 30 March 2023  |  এখন সময়:

Advertise@01680 34 27 34

জেনেভা ক্যাম্প অভিযানের আদ্যোপান্ত


নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত:   ০৫:০৫ এএম, শনিবার, ২৬ মে ২০১৮    
জেনেভা ক্যাম্প অভিযানের আদ্যোপান্ত
জেনেভা ক্যাম্প অভিযানের আদ্যোপান্ত

এই প্রথমবারের মতো ঢাকায় মাদকের সবচেয়ে বড় পুরনো আখড়া হিসেবে পরিচিত উর্দুভাষী অবাঙালীদের ক্যাম্পগুলোর মধ্যে মোহাম্মদপুরের জেনেভাক্যাম্পে কোন প্রকার সংঘর্ষ ছাড়াই মাদক বিরোধী অভিযান চালাতে সক্ষম হয়েছে র‌্যাব।


রীতিমত ফিল্মি কায়দায় চালানো অভিযানে নামানো হয়েছিল র‌্যাবের মাদক উদ্ধারে দক্ষ ডগ স্কোয়াডকে। যারা গন্ধ শুঁকে মাদকের অবস্থান সম্পর্কে জানিয়ে দিতে সক্ষম। অভিযানে কয়েকজন নারী মাদক ব্যবসায়ীসহ অন্তত দুই শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা, ফেনসিডিলসহ নানা ধরনের মাদক। গ্রেফতারকৃতদের ছাড়াতে চলছে নানামুখী তৎপরতা। 


শনিবার ভোর থেকে অভিযানটি চালানো হয়। অভিযান চলে অন্তত টানা ছয় ঘণ্টা। ক্যাম্পের বাসিন্দারা জানান, তাদের অনেকেই ঘুমেই ছিলেন। তারা জেগে ওঠে ক্যাম্পের বাইরে যেতে গেলে তাদের চোখ ছানাবড়া। চারদিকে শুধু র‌্যাব আর র‌্যাব। চারদিকে ক্যাম্পটি ঘিরে ফেলে র‌্যাব। এরপর সেখানে অভিযান শুরু হয়। ঢাকায় অবস্থিত র‌্যাব-১, ২, ৩ ও ৪ এর একাধিক ইউনিটের সমন্বয়ে গঠিত দলটি অভিযান শুরু করে।ক্যাম্পবাসীদের ভাষ্য, তারা ইতোপূর্বে এত র‌্যাব সদস্য ক্যাম্পে আর কোনদিনই দেখেননি। 

এমন সাঁড়াশি অভিযানও আর দেখেনি। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে র‌্যাবের গোয়েন্দা দল ও ডগ স্কোয়াড অভিযানে অংশ নেয়। শুরু হয় ফিল্মি স্টাইলে অভিযান। র‌্যাবের ডগ স্কোয়াডের প্রশিক্ষিত কুকুরগুলো একের পর এক মাদকের সন্ধান দিতে থাকে। আর র‌্যাব সদস্যরা মাদক উদ্ধার করতে থাকে। পুরো এলাকায় হৈচৈ পড়ে যায়। অনেকে দোকান খুললেও তারা ভয়ে দোকানপাট বন্ধ করে দেন। মাদক ব্যবসায়ীদের অনেকেই মাদক রাস্তায় ফেলে সাধারণ ক্যাম্পবাসীর সঙ্গে মিশে যায়। 


ক্যাম্পের প্রতিটি গলিতে একে একে চলতে থাকে অভিযান। ক্যাম্পবাসীদের অনেকেই বলছিলেন, এই প্রথমবারের মতো কোন মাদক বিরোধী অভিযান হলো কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই। কারণ ইতোপূর্বে যত অভিযান হয়েছে প্রতিটি অভিযানেই পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের লোকজনের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাতে অনেক আহত হয়েছেন। 

অভিযানকালে মাদক ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে যায়। তারা ক্যাম্পে গুজব ছড়িয়ে নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা ও শিশুদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর লেলিয়ে দেয়। ফলে বার বার অঘটন ঘটে। এইবারই প্রথম র‌্যাব কৌশলী অভিযান চালিয়েছে। কোনপ্রকার গুজব ছড়ানোর সুযোগ পায়নি। র‌্যাব কোন প্রকার গুজব ছড়ানোর ন্যূনতম সুযোগ পায়নি। এমন অভিযানে তারা খুশি। কারণ মাদকের যন্ত্রণায় তাদের ছেলে মেয়েরা অল্প বয়সেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। মাদকাসক্তরা পরিবারের জন্য বোঝা। তারা বাসা বাড়ির জিনিসপত্র বিক্রি করে মাদক সেবন করে। তাতেও যখন না হয়, তখন নিজেই মাদক ব্যবসায় নেমে পড়ে।


আর এভাবেই ক্যাম্পে দিন দিন মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেড়েছে। সরকারের উচিত প্রতিনিয়ত এ ধরনের অভিযান চালানো। ক্যাম্পটিতে অন্তত ৭ হাজার পরিবারের বসবাস। অভিযানের বিষয়ে র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান সাংবাদিকদের জানান, ক্যাম্প অত্যন্ত ঘিঞ্জি। এ জন্য অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে অভিযান চালাতে হয়েছে। শুধুমাত্র মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করতেই অভিযানটি চালানো হয়েছে। অভিযানে ক্যাম্পে থাকা বিভিন্ন কমিটির কর্তা ব্যক্তিদের সহায়তা নেয়া হয়েছে। এ ধরনের ঝটিকা অভিযান অব্যাহত থাকবে। 

গ্রেফতার হয়েছে কয়েকজন নারীসহ ১৫৩ জন মাদক ব্যবসায়ী। ৭৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। আর বাকি ৭৬ জনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হয়েছে। যারা পালিয়ে গেছে তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত থাকবে। র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এমরানুল হাসান জানান, অভিযানকালে গলির বিভিন্ন রাস্তা 


থেকে গাঁজা, ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য উদ্ধার হয়েছে। এবারই প্রথম মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতিরোধ করার ন্যূনতম চেষ্টা করেনি। ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সাল থেকে অদ্যাবধি মাদক ব্যবসার আধিপত্য বিস্তার, পুলিশের অভিযানকালে অন্তত ৫ বার হাঙ্গামার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৬ সালে চালানো পুলিশের এক অভিযানের সময় মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশের থেমে থেমে চৌদ্দ ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলে। 

ওই সময় হার্টএ্যাটাকে এক বয়স্ক মহিলার মৃত্যু হয়। আর সংঘর্ষে তিন পুলিশসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়। সংঘর্ষকালে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, দোকানপাট, বাড়িঘর, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটে। জানা গেছে, শান্তি কমিটি নামের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ ৪০ জন যুবক নিয়ে পুরো ক্যাম্পে মাদকের ব্যবসা নিযন্ত্রণ করত। শান্তি গ্রুপের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ক্যাম্পের ৪০ হাজার বাসিন্দাসহ আশপাশের মানুষ। ক্যাম্পে জাল টাকার ব্যবসা চলে। ক্যাম্পের আশপাশে অবৈধ বিদ্যুত ও পানির সংযোগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। ইতোপূর্বে ২০১৩ সালে পর পর দুইটি বোমা তৈরির কারাখানার সন্ধান পেয়েছিল র‌্যাব। ক্যাম্পগুলো থেকে উদ্ধার হয়েছিল ১৩২টি বোমা। 


২০১৬ সালে ক্যাম্পের বাসিন্দারা মাদক ব্যবসায়ীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ১২ মাদক ব্যবসায়ীকে ধরে ধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছিল। গত বছর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চালানো মাদক বিরোধী অভিযানকালে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। মাদক ব্যবসায়ীরা ক্যাম্পের ভেতরে একজন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একজন উর্ধতন কর্মকর্তাসহ অন্তত ৫ জনকে আটকে ফেলেছিল। শেষ পর্যন্ত আমর্ড পুলিশ ও থানা পুলিশ এবং র‌্যাবের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করা হয়। বছরের পর বছর ধরে ক্যাম্পগুলোতে অভিযান চালানো হলেও কোনদিনই মাদক নির্মূল করা যায়নি। কয়েকদিন পর আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে মাদক ব্যবসায়ীরা। ক্যাম্পে থাকা মাদক ব্যবসায়ী চক্রগুলো নারী ও জালটাকার ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত থাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুন...