গবেষণায় দাবি ফিল্টারের পানি উপকারের বদলে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি
অনলাইন ডেস্কঃ
প্রকাশিত: ০৯:০৪ এএম, বুধবার, ১২ এপ্রিল ২০২৩ আপডেট: ০৯:০৪ এএম, বুধবার, ১২ এপ্রিল ২০২৩
এক কালে বাড়িতে পানি পরিশোধনের তেমন কোনো উপায় ছিল না। এ কারণে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ যেমন- জন্ডিস, ডায়রিয়া, টাইফয়েড দূরে রাখতে পানি ফুটিয়ে খাওয়ার চল ছিল। তবে আজকাল বাজারে নানা রকম ফিল্টার পাওয়া যায়। এ কারণে অনেকে পানি পরিশোধনের জন্য ফিল্টারেরর উপর নির্ভর করেন।
অনেক সময়েই রোগীদের ফোটানো পানি খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। ফিল্টার থাকলেও পানি ফুটিয়ে খেতে বলা হয় অনেক সময়ে। কিন্তু এমন কেন বলা হয়ে থাকে? তা হলে কি ফিল্টারের পানি যথেষ্ট পরিষ্কার নয়? এ নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন আছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পানি যখন ফোটানো হয়, তখন ১০০ ডিগ্রির উপর তাপমাত্রায় পৌঁছায়। ওই তাপে পানির সব রকম জীবাণু মরে যায়। সে কারণেই পানি ফুটিয়ে খাওয়ার চল রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্তত ২০ মিনিট ফোটাতে হবে পানি। না হলে কোনওভাবেই পানির সব জীবণু মারা সম্ভব নয়।
এতদিন ফোটানো পানির চেয়েও ফিল্টারের পানি বেশি স্বাস্থ্যসম্মত বলে মনে করা হত। কারণ, পানিতে শুধু সাধারণ জীবাণু নয়, সঙ্গে অন্যান্য রাসায়নিকও থাকে। সে সব পদার্থও সরিয়ে দেওয়া হয় ফিল্টারে। আর পানিতে থেকে যায় শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সব জিনিস।
টেলিভিশনে বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি। দোকানে খাওয়ার পানি পরিশ্রুত করার যন্ত্র কিনতে গেলে সেখান থেকেও রিভার্স অসমোসিস বা ‘আরও’ ওয়াটার পিউরিফায়ারের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। শহরে বা গ্রামাঞ্চলেও এই ‘আরও’ পিউরিফায়ারের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। কারণ, বেশির ভাগ মানুষের ভাবেন এই ‘আরও’ বা রিভার্স অসমোসিস পদ্ধতিতে পরিশোধিত পানি সব চেয়ে সুরক্ষিত এবং স্বাস্থ্যকর। কিন্তু হালের গবেষণা বলছে অন্য কথা। আমাদের দেশে যে ধরনের পানি খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়, তা ‘আরও’ পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে পরিশ্রুত করার কোনও প্রয়োজন পড়ে না। আর এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে পানির অপচয় হয় বেশি। আইআইএসসি-এর গবেষক সম্বুদ্ধ মিশ্র'র গবেষণা মতে ফিল্টারের পানির চেয়েও ফোটানো পানি বেশি স্বাস্থ্যসম্মত এবং প্রকৃতি-বান্ধব।
‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স ব্যাঙ্গালোর’ (আইআইএসসি)-এর গবেষক সম্বুদ্ধ মিশ্র বলেন, “বেশির ভাগ সময়ে পানির মধ্যে যে অশুদ্ধি মিশে থাকে, তা হল ধাতু। তবে কোনও জীবাণু যে একেবারে থাকে না, তা নয়। কিন্তু তার জন্য রিভার্স অসমোসিস পদ্ধতির সত্যিই কোনও প্রয়োজন নেই। আর সব চেয়ে বড় কথা এই পদ্ধতিতে পানি পরিশোধন করলে প্রতি দশ লিটার পানি পরিশোধন করে সেখান থেকে পরিশোধিত পানি পাওয়া যায় মাত্র ৩ লিটার। আর বাকি ৭ লিটার পানির সঙ্গে আরও বেশি মাত্রায় ধাতু মিশে তা বাইরে বেরিয়ে আসে। যা পরবর্তী কালে আবার সেই ভূগর্ভস্থ পানির সঙ্গে গিয়ে মেশে। এতে দূষণের মাত্রা দ্বিগুণ হয়।”
গবেষক সম্বুদ্ধ মিশ্র এবং তাঁর সহযোগীরা ২০২১ থেকে ২০২২ সাল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া অঞ্চলে এই সংক্রান্ত গবেষণার কাজ শুরু করেন। গবেষণা শেষে তাঁরা দেখেন, ওই অঞ্চলের পানিতে অন্যান্য ধাতু, এমনকি পারদের পরিমাণ অনেকটাই কম। সম্বুদ্ধর মতে, “এই পদ্ধতিটি দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারের জন্য ক্ষতিকর। স্বাস্থ্যকর পানি পাওয়ার বদলে সেই পানি থেকে নিজের এবং পরিবেশের ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি।” এই ‘আরও’ পদ্ধতিটি পরিশ্রুত করার সময়ে পানিতে মিশে থাকা অশুদ্ধির পাশাপাশি, উপকারী প্রাকৃতিক খনিজ এবং আয়নও নষ্ট করে।
পানি পরিশোধন করার নানা পদ্ধতি রয়েছে। তবে সব চেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি হল ফোটানো। আইআইটি শিক্ষক, গবেষক ইন্দ্র শেখর সেন বলেন, “পানিে থাকা সমস্ত রকম ব্যাকটেরিয়া নির্মূল করতে পানি ফুটিয়ে খাওয়াই ভাল।”