ঢাকা, সোমবার ১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৭ | এখন সময়:

Advertise@01680 34 27 34

এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার পেলেন তাঁরা


বিনোদন ডেস্কঃ

প্রকাশিত:   ০১:১১ এএম, বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর ২০২০   আপডেট:   ০১:১১ এএম, বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর ২০২০  
এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার পেলেন তাঁরা
এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার পেলেন তাঁরা

‘আমরা তাঁকে শুধুই এক ভাবে দেখার চেষ্টা করি। তিনি “বাকের ভাই” লিখেছেন কিংবা জনপ্রিয় নাটক লিখেছেন,Ñএ ধরনের কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে সেই দৃষ্টিভঙ্গি। প্রকৃত অর্থে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে এখন পর্যন্ত যথাযথ বিচার-বিশ্লেষণ হয়নি। জনপ্রিয় লেখকের পরিচয় ছাপিয়ে তাঁর সৃষ্টিশীলতার সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। তাঁর জনপ্রিয়তার নেপথ্যে অনেকগুলো কারণ আছে। সেগুলো বিশ্লেষণ করা উচিত।’

 বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ‘হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার’ প্রদান অনুষ্ঠানে হুমায়ূন আহমেদকে এভাবে মূল্যায়ন করেন আসাদুজ্জামান নূর। তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদ এ দেশের টিভি নাটকের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর নাটকের প্রতিটি চরিত্রই ছিল একই সঙ্গে আকর্ষণীয় ও জরুরি। অথচ এখনকার নাটকে প্রেম ছাড়া আর কিছু খুঁজে পাওয়া যায় না। একইভাবে নাটকের গল্পের নায়ক-নায়িকা ছাড়া অন্য চরিত্রগুলোকে খুঁজে পেতে কষ্ট হয়।

 হ‌ুমায়ূন আহমেদকে কেন্দ্র করে এই আয়োজন ছিলো পুরষ্কার প্রদানের। অবশ্য আয়োজক প্রতিষ্ঠান আগেই সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছিল। সমাগত ব্যক্তিরা সবাই জানতেন কোন দুই গুণী পাচ্ছেন এ বছরের হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার। অবশ্য এ জন্য দর্শকের আগ্রহের কমতি ছিল না। বরং পুরস্কার দেওয়া-নেওয়ার পাশাপাশি হুমায়ূন আহমেদকে বিষয় করে আড্ডায় দারুণ সময় কাটালেন অনুরাগী ও স্বজনেরা।

১৯৭২ সালে প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ দিয়েই হ‌ুমায়ূন আহমেদ কথাসাহিত্যে পালাবদলের তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এরপর একের পর এক উপন্যাসে পাঠকের কাছে নন্দিত হয়েছেন অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা নিয়ে। অনেক দিন ধরেই তাঁর জনপ্রিয়তা তুঙ্গস্পর্শী। তিনি মধ্যবিত্ত জীবনের কথকতা সহজ-সরল গদ্যে তুলে ধরে পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন। আমৃত্যু সেই জনপ্রিয়তার স্রোতে ভাটার টান পড়েনি। বাংলা সাহিত্যের বরপুত্র হিসেবে তাঁকে আখ্যায়িত করেছেন সাহিত্য সমালোচকেরা। আপন দ্যুতিতে উদ্ভাসিত এই লেখকের স্মরণে দেশের কথাসাহিত্যিকদের শিল্পসৃষ্টিতে প্রেরণা জোগাতে ২০১৫ সালে প্রবর্তিত হয়েছে ‘হ‌ুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার’। এক্সিম ব্যাংকের সহযোগিতায় পুরস্কারটি প্রবর্তন করেছে জনপ্রিয় পাক্ষিক ‘অন্যদিন’। কাল শুক্রবার সেই জননন্দিত লেখক হ‌ুমায়ূন আহমেদের ৭২তম জন্মবার্ষিকী। দিনটিকে সামনে রেখে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হ‌ুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার-২০২০’ দিল এক্সিম ব্যাংক ও পাক্ষিক পত্রিকা ‘অন্যদিন’।

মূলত কথাসাহিত্যে অবদানের জন্যই ‘হ‌ুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার’। সামগ্রিক অবদানের জন্য প্রতিবছর একজন প্রবীণ ও একজন নবীন কথাসাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। এবার সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য এ পুরস্কার পেয়েছেন কথাসাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাই। আর ‘পুরুষপাঠ’ শীর্ষক গল্পগ্রন্থের জন্য নবীন সাহিত্যশ্রেণিতে এ পুরস্কার পেয়েছেন গল্পকার নাহিদা নাহিদ। 

আজ বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবীণ ও নবীন দুজন কথাসাহিত্যিকের হাতে তুলে দেওয়া হয়। স্মারক, সনদপত্রের পাশাপাশি হাসনাত আবদুল হাই এবং নাহিদা নাহিদ পাঁচ লাখ ও এক লাখ টাকার সম্মানী পেয়েছেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। তিনি আবারও মনে করিয়ে দেন, হুমায়ূন আহমেদের সবচেয়ে বড় গুণ পাঠককে ধরে রাখতে পারা। তাঁর বই একবার পড়া শুরু করলে সেটা শেষ না করে থামা যায় না। মানুষ যত খারাপই হোক না কেন, প্রতিটি মানুষের মধ্যে কিছু ভালো দিক আছে, সেটা হুমায়ূন আহমেদ তাঁর বইয়ের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। সংস্কৃতিজন ও সাংসদ আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া। স্বাগত বক্তব্য দেনন ‘অন্যদিন’ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম।

আয়োজনের শুরুতেই জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এবং ‘কালি ও কলম’ সম্পাদক আবুল হাসনাতের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনে পালন করা হয় এক মিনিটের নীরবতা। এরপর ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন বিচারকমণ্ডলীর প্রধান অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। এ পুরস্কারে বিচারকমণ্ডলীর অন্য সদস্যরা ছিলেন সদ্য প্রয়াত ‘কালি ও কলম’ সম্পাদক আবুল হাসনাত, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিশ্বজিৎ ঘোষ ও কথাশিল্পী হরিশংকর জলদাস। 

পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশে হাসনাত আবদুল হাই বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমি প্রায় ১৫০টি বই লিখেছি। তবে এগুলোর মধ্যে বড় মাপের কোনো বই নেই। এত বইয়ের মধ্যে পাঠক কেবলমাত্র তিন-চারটি বইয়ের প্রশংসা করেন। যাতে আমি তৃপ্ত হই না। আমি সাহিত্যের সব শাখাতেই কিছু করার চেষ্টা করেছি। আর সব শাখায় কাজ করতে গেলে ওস্তাদ হওয়া যায় না। যদি আমি বিশেষ কোনো শাখায় ধারাবাহিকভাবে লিখতাম, তাহলে হয়তো ভালো লিখতে পারতাম। তবে এ নিয়ে আমার আফসোস নেই। একই ধরনের লেখালেখির একঘেয়েমি আমার ভালো লাগে না। আমি বৈচিত্র্যের অনুসারী।’ কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আমি উইলিয়াম শেক্‌সপিয়ারের “হ্যামলেট” ও “ম্যাকবেথ” এ দুই নাটককে এক করে “হ্যামবেথ” নামের একটি নাটক লিখেছি। আমার আগে আর কেউ দুটি নাটককে এক করে লেখেননি। আমি বলতে চাই, এটাই আমার জীবনের সেরা লেখা।’

নাহিদা নাহিদ বলেন, ‘এই পুরস্কারপ্রাপ্তিতে আমি উচ্ছ্বসিত ও আপ্লুত। এটা আমার কাছে এক ধরনের দুঃসাহসিক প্রাপ্তি। কারণ, যার নামাঙ্কিত এই পুরস্কার তাঁর লেখার কাছে নিজের লেখাকে বিবর্ণ মনে হয়। তাই এই মঞ্চে দাঁড়াতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। এ পুরস্কার আমাকে সাহস জোগাবে। সেই সাহস নতুন কিছু সৃষ্টিতে প্রেরণা জোগাবে।’ মেহের আফরোজ শাওন বলেন, যাঁরা এ সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন, তাঁদেরকে হুমায়ূন আহমেদ পরিবারে স্বাগত। বিশেষ করে তরুণ লেখকদের অনুপ্রাণিত করবে এ পুরস্কার।

আপনার মন্তব্য লিখুন...