ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪  |  Thursday, 18 April 2024  |  এখন সময়:

Advertise@01680 34 27 34

এই রায়ে হলের ‘বড় ভাই’ ও শিক্ষকদের যেন চোখ খোলে: মোশাররফ হোসেন কাজল


অনলাইন ডেস্কঃ

প্রকাশিত:   ০২:১২ এএম, বুধবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট:   ০২:১২ এএম, বুধবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২১  
এই রায়ে হলের ‘বড় ভাই’ ও শিক্ষকদের যেন চোখ খোলে: মোশাররফ হোসেন কাজল
এই রায়ে হলের ‘বড় ভাই’ ও শিক্ষকদের যেন চোখ খোলে: মোশাররফ হোসেন কাজল

বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ ছাত্রকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দণ্ডিতরা সবাই বাংলাদেশে প্রকৌশল শিক্ষার সবচেয়ে ভালো এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র। রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে এই হত্যা মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে ঘটনার খুঁটিনাটি জেনেছেন মোশাররফ হোসেন কাজল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ছাত্ররাজনীতি ও ‘বড় ভাই’চর্চার নামে যেগুলো ঘটছে, তা অন্যায়। এ ধরনের ঘটনা বন্ধ করার দায়িত্ব যাঁদের, সেই শিক্ষকেরা তা পালন করছেন না। এর ফলেই আবরার ফাহাদের মতো ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এই চর্চা বন্ধ না হলে এ নৃশংসতাও থামবে না।

প্রশ্নঃ বুয়েটের আবরার ফাহাদ হত্যার রায়কে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

মোশাররফ হোসেন কাজল: বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় বড় ভাইয়েরা নৈরাজ্য সৃষ্টি করে রেখেছেন। নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে তাঁরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে ছোট ভাইদের তাঁরা অপমান, অপদস্থ, নৃশংসতা, অবিচার করেন, সেটা নজিরবিহীন। র‍্যাগিংয়ের নামে হোক বা ছাত্ররাজনীতির নামে হোক, বড় ভাইয়ের নামে হোক, সিনিয়রদের নামে হোক, যে নামেই হোক—এ ধরনের নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যাঁরা পড়তে আসেন, তাঁদের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করতে হবে। তাঁদের কারও বাবা দরিদ্র, কারও বাবা মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত। বড় ভাই যদি ছোট ভাইকে হাত ধরে পথ না দেখান, তাহলে কি হবে? এ ধরনের ঘটনাই ঘটবে। বড় ভাইয়েরা যাতে ভবিষ্যতে পথ দেখান এবং এই নৃশংসতা পরিহার করেন, তার জন্য এই রায় একটা বার্তা। আবরার নামের একজন ছাত্র মায়ের কাছ থেকে (কুষ্টিয়া) সেদিন হলে এসেছিলেন। তারপর তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। রাতের বেলা তাঁর বন্ধুকে বলেছিলেন, ‘তোমরা আমাকে ডেকে দিয়ো, রাতে পড়াশোনা করব।’ সেখান থেকে তাঁকে ডেকে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদের নামে চড়–থাপ্পড় থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল। এই যে নৃশংসতা, এটার কি কোনো কারণ ছিল? এটা করার কোনো কারণ ছিল না। এটা হলো নৃশংসতা, ক্ষমতা দেখানো, নৈরাজ্য সৃষ্টি করা এবং ক্ষমতা জাহির করার একটা প্রক্রিয়া। প্রতিনিয়ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এই ঘটনা বন্ধ করা উচিত। আমি আরও বলব, এসব প্রতিষ্ঠানে যাঁরা শিক্ষক আছেন, হাউস টিউটর আছেন, প্রভোস্ট আছেন, তাঁদের আরও দায়িত্বশীল হতে বলব। আপনাদের দায়িত্ব সম্পাদন করার জন্য আপনাদের পদে রাখা হয়েছে। রায়ের মধ্যে এসেছে, এই নৈরাজ্য, এই নৃশংসতা যেন ভবিষ্যতে আর না ঘটে। আজকের রায়টি নজির হিসেবে উল্লেখ থাকবে। ভবিষ্যতে সব সংগঠন, সব ছাত্রসংগঠন, ছাত্ররাজনীতি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবাই সজাগ হবে।

প্রশ্নঃ  রায়ে আদালত বলেছেন, আবরার ফাহাদের নৃশংস হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের সব মানুষকে ব্যথিত করেছে। আদালতের পর্যবেক্ষণকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

মোশাররফ হোসেন: উচ্চতর আদালতে গিয়ে এই রায় কোন পর্যায়ে পৌঁছাবে, তা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে আমি মনে করি, আজকে যে রায়টা ঘোষিত হয়েছে, এটা সমাজে, দেশে একটা বার্তা পৌঁছে দেবে। বার্তাটি হচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে নৈরাজ্য, যে উচ্ছৃঙ্খলতা, যে বেয়াদবি, সাধারণ ছাত্রদের ওপর একধরনের আধিপত্য যাঁরা দেখান, তাঁরা যেন সতর্ক হন। যে ছাত্রটি সিনিয়রিটি দেখান, তিনিও কিন্তু একই ধরনের ব্যবহারই পান। এ মামলায় কারও কারও কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এই ঘটনা কেন তাঁরা প্রতিরোধ করেননি। তখন তাঁরা বলেছিলেন, এ ধরনের ঘটনা তো প্রতিনিয়ত ঘটছে। কয়েক দিন আগে মেরে হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের ঘটনা যে প্রতিনিয়ত ঘটছে, এই ঘটনাগুলো বন্ধ হোক। বুয়েটসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাঁরা শিক্ষক, যাঁরা আমাদের শিক্ষা দেন, যাঁরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোয়ার্টারে থাকেন, ছাত্রদের দেখাশোনা করা যাঁদের দায়িত্ব, যাঁরা দায়িত্ব নিয়েছেন, যাঁরা পদ নিয়ে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন, তাঁদের কাছে একটা বার্তা পৌঁছাবে যে হাউস টিউটরের দায়িত্ব কী? কেন কক্ষে বাতি জ্বলে, কিন্তু কক্ষে ছাত্র থাকে না। হলগুলোতে তাঁদের দায়িত্ব কী? কোথায় কী ঘটছে, সেগুলো দেখা। কিন্তু আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে কী প্রমাণ হয়েছে, উচ্ছৃঙ্খলতা প্রমাণ হয়েছে। কোনো কোনো শিক্ষক দায়িত্ববোধ থেকে কোনো কাজ করেন না। প্রসিকিউটর হিসেবে আমি মনে করি, প্রত্যেকের দায়িত্বশীল হওয়া উচিত।

প্রশ্নঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোয় উচ্ছৃঙ্খল পরিবেশ, ছাত্ররাজনীতির নামে যেসব অপরাধ করা হয়, সে বিষয়ে আপনার মত কী?

মোশাররফ হোসেন: রাজনীতি করা কোনো দোষের কিছু নয়। কিন্তু রাজনীতির নামে উচ্ছৃঙ্খলতা ঘৃণ্য অপরাধ। একজন মানুষকে ডেকে নিয়ে এসে দুটো কথা আপনি জিজ্ঞাসা করতেই পারেন। কিন্তু রাত সাড়ে ৮টা থেকে ভোর রাত ৪টা পর্যন্ত একজন ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে পিটিয়ে হত্যা করা জঘন্য অপরাধ। রাতের বেলা কী হয়, দিনের বেলা কী হয়, হাউস টিউটরদের উচিত ছিল আরও সজাগ হওয়া। আমি মনে করি, তাঁরা (হাউস টিউটর) যদি আরও সজাগ হতেন, তাহলে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। মাননীয় আদালতে এসব শিক্ষক এসেছেন এবং তাঁরা সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন, এই ঘটনার কথা বলে গেছেন। কিন্তু এটাও তো ঠিক, আমি প্রসিকিউটর হিসেবে মনে করি, তাঁদের যে দায়িত্ব ছিল, সেই দায়িত্ব তাঁদের সম্পাদন করা উচিত ছিল। তাঁদের খেয়াল রাখা উচিত ছিল, হলের প্রতিটি রুমে কী ঘটনা ঘটছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, ভবিষ্যৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষকমণ্ডলী যেন এই ঘটনা ভুলে না যান। আগে ছাত্ররাজনীতিতে পড়াশোনা হতো। আমরা যখন ছাত্রলীগ করেছি, তখন পড়াশোনা করা হতো। আমাদের জ্ঞান অর্জনের জন্য শিক্ষণীয় বিষয়ে বই–পুস্তক দেওয়া হতো। শুরুই করেছি ছোটদের রাজনীতি পড়ে, ছোটদের অর্থনীতি পড়ে। এখন ছাত্ররাজনীতিতে ক্লাস করা, পড়াশোনা করা, তাদের ট্রেন্ড আপ করা—এসব বিষয় থেকে আমরা অনেক দূরে আছি। এসব কারণে এই ঘটনাগুলো ঘটছে।

মতামত থেকে আরও পড়ুন

আবরার হত্যা বুয়েট হত্যাকাণ্ড ছাত্র রাজনীতি

আপনার মন্তব্য লিখুন...