ঢাকা, সোমবার ১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৭ | এখন সময়:

Advertise@01680 34 27 34

উচ্চ সুদের ঋণে রেল ইঞ্জিন নয়


অনলাইন ডেস্কঃ

প্রকাশিত:   ০৮:০৯ পিএম, সোমবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট:   ০৮:০৯ পিএম, সোমবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১  
উচ্চ সুদের ঋণে রেল ইঞ্জিন নয়
উচ্চ সুদের ঋণে রেল ইঞ্জিন নয়

বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৭০টি ইঞ্জিন কেনা হবে, এই ঘোষণা ১০ বছর আগের। মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও প্রকল্পের অগ্রগতি ছিল শূন্য। ফলে ২০১৮ সালে মেয়াদ বাড়ানো হয় আরও ছয় বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সাল পর্যন্ত। সেই সঙ্গে প্রকল্প ব্যয়ও বাড়ানো হয়।

এবারও তিন বছর প্রায় শেষ হতে চলল, অগ্রগতি বলতে কেবল তিনটি ঋণ চুক্তির খসড়া হয়েছে। ঠিক এ রকম সময়ে এসে অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে ইঞ্জিনগুলো কেনা ঠিক হবে না। কিনতে হবে সহজ শর্তের নমনীয় ঋণের অর্থে। কোরীয় সরকারের নমনীয় উৎসের বা অন্য কোনো উৎসের নমনীয় ঋণ সংগ্রহ করা বাঞ্ছনীয় হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ গত মাসে এক চিঠিতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনকে এ কথা জানিয়ে দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন
পাঁচ বছর মেয়াদি ‘৭০টি মিটারগেজ ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ (রেল ইঞ্জিন) ক্রয় প্রকল্প’ হাতে নেওয়া হয় ২০১১ সালে। এগুলো কিনতে কোরীয় এক্সিম ব্যাংক থেকে ১৪ বছর মেয়াদে ১২ কোটি ৬৪ লাখ মার্কিন ডলার ও সেখানকার ট্রেড ইনস্যুরেন্স করপোরেশন থেকে ১৪ বছর মেয়াদে প্রায় ১১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক থেকে ছয় বছর মেয়াদে বাড়তি ঋণ নেওয়া হবে ৪ কোটি ডলার বা ৩৪০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ঋণের পরিমাণ ২৮ কোটি ২ লাখ ৩০ হাজার ডলার। প্রতি ডলার ৮৫ টাকা দরে বাংলাদেশি মুদ্রায় তা দাঁড়ায় ২ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। অথচ প্রকল্পের চুক্তিমূল্য হচ্ছে ২৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬০ হাজার ডলার বা ২ হাজার ৩৫ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, মূল সমস্যা হচ্ছে, সময় বেশি হয়ে যাওয়ার কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে অনেক। তবে রেল ইঞ্জিন কেনা যাবে না, অর্থ বিভাগ এ কথা বলার কথা নয়।

সূত্রগুলো জানায়, পরিকল্পনা কমিশন তিন বছর আগেই এই উচ্চ সুদের ঋণ নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। সেই সঙ্গে ঋণের পরিবর্তে সরকারি অর্থায়নেই ইঞ্জিন কেনার সুপারিশ করেছিল।

এদিকে ইআরডির পাঠানো চুক্তিগুলোর খসড়া পর্যালোচনা করে অর্থ বিভাগ বলছে, রক্ষণশীল হিসাবেও তিনটি ঋণের গড় সুদের হার ৩ দশমিক ৩৩। পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব করলে সব মিলিয়ে তা ৫ শতাংশের বেশি হবে। সাধারণত দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বাংলাদেশ সব সময়ই নমনীয় ঋণ পেয়ে থাকে। ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কোরিয়া থেকে ৭ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ।

প্রকল্প বাস্তবায়নে কোরিয়ার নমনীয় উৎসের ঋণই সংগ্রহ করা উচিত ছিল। সেই চেষ্টা না করে কেন অতি উচ্চ হারের ঋণ প্রক্রিয়াকরণ করা হলো, প্রস্তাবের সঙ্গে তার কোনো ব্যাখ্যাও নেই ইআরডির। উচ্চ সুদের এই ঋণ নিলে পরবর্তী সময়ে কোরীয় সরকার থেকে নমনীয় ঋণ পেতে বরং বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে বাংলাদেশের।

অর্থ বিভাগের মতামতসহ পুরো বিষয়টি তুলে ধরলে সাবেক অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, ‘কত বছর আগে প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল, বাস্তবায়নে অগ্রগতি নেই কেন, সে ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাই না। তবে অর্থ বিভাগ যে মতামত দিয়েছে, তা ঠিকই মনে হচ্ছে। নমনীয় ঋণ পাওয়া খুব কঠিন কিছু নয়। রেল ইঞ্জিন কিনতে উচ্চ সুদের অনমনীয় ঋণ নেওয়ার কোনো মানে হয় না।’

বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ফ্রান্স, জাপানসহ বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় উৎস থেকে এখনো নমনীয় ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ। রেল ইঞ্জিন কিনতে উচ্চ হারে এই ঋণ নিলে সবার কাছেই একটি ভ্রান্ত ধারণা যাবে এবং অযাচিত উদাহরণ তৈরি হবে বলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। অর্থ বিভাগ ও পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, সরবরাহকারী ঋণ (বায়ার্স বা সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট) নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো প্রকল্পের বিপরীতে কঠিন শর্তের অনমনীয় ঋণ নেওয়ার আগে নমনীয় ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করা উচিত, এটাই প্রচলিত নিয়ম। নমনীয় ঋণ পাওয়া না গেলেই বিকল্প উৎসের দিকে যেতে হয়।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ইআরডি বা রেলওয়ে নমনীয় ঋণ পেতে কোনো চেষ্টা করেছে, এমন প্রমাণ পায়নি অর্থ বিভাগ। আবার চুক্তিমূল্য ২ হাজার ৩৫ কোটি টাকা হলেও বাড়তি ৩৪০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার চিন্তা কেন করা হলো, সেই যৌক্তিকতাও খুঁজে পায়নি অর্থ বিভাগ। আবার প্রকল্পের ঠিকাদার কোরীয় কোম্পানি হুন্দাই রোটেমের সঙ্গে সরকারের যে চুক্তি হয়েছে, তাতেও নমনীয় ঋণ নেওয়ার কথা বলা আছে।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রকল্পটির বর্তমান পরিচালক আহমেদ মাহবুব চৌধুরী গত শনিবার বলেন, ‘অর্থ বিভাগের মতামত সম্পর্কে কিছু জানি না। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অগ্রগতি না হওয়ার পেছনে অনেক কারণই রয়েছে। তবে অনমনীয় ঋণের ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয় নিজেও আগে অনুমোদন দিয়েছিল।’

প্রকল্পটি ২০১১ সালের আগস্টে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদনের পরে একই বছরে প্রথম দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু কোনো দরপত্র জমা পড়েনি। ২০১৩ সালে ডাকা দ্বিতীয় দরপত্রেও কেউ অংশ নেয়নি। ২০১৪ সালে তৃতীয় দফার দরপত্রে অংশ নিয়ে কাজ পায় হুন্দাই রোটেম।

আপনার মন্তব্য লিখুন...