ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪  |  Friday, 29 March 2024  |  এখন সময়:

Advertise@01680 34 27 34

ই-কমার্স খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যা করা দরকার


অনলাইন ডেস্কঃ

প্রকাশিত:   ১০:১২ পিএম, সোমবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট:   ১০:১২ পিএম, সোমবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২১  
ই-কমার্স খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যা করা দরকার
ই-কমার্স খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যা করা দরকার

২০১৬ সালে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের চেয়ারম্যান ক্লাউস সোয়াবের ‘দ্য ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন’ বইয়ে চলমান প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বিপ্লবকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ১৭৮৪ সালে বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া প্রথম শিল্পবিপ্লব যেমন সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনের চিত্রপট পাল্টে দিয়েছিল, তেমনি দ্বিতীয় ও তৃতীয় শিল্পবিপ্লবের পর বর্তমান চতুর্থ শিল্পবিপ্লব তথা ডিজিটাল বিপ্লবও মানুষের জীবন ধারায় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের সামগ্রিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসছে। ফলে একবিংশ শতাব্দীতে এসে প্রযুক্তির উন্নয়নের মধ্য দিয়ে মানুষ প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সম্ভাবনাকে আলিঙ্গন করছে।

নতুন মানেই একই সঙ্গে যেমন সম্ভাবনা, তেমনি চ্যালেঞ্জও বটে। তবুও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও এই চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবিলা করেই অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রাঙ্গণে নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে। গত দশকের শুরুর দিকে দেশের বাণিজ্যিক খাতে তেমনি এক সম্ভাবনার খাত হিসেবে আবির্ভাব ঘটে ই-কমার্সের।

অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা, অর্থাৎ ই-কমার্স দেশের অর্থনীতিতে নতুন এক মাত্রা যোগ করেছে। বহু তরুণ উদ্যোক্তা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা নিজেদের সমৃদ্ধির জন্য ই-কমার্সকে অবলম্বন হিসেবে বেছে নিচ্ছেন এবং সফলও হচ্ছেন। এর পাশাপাশি বহু মানুষ ডেলিভারিম্যান হিসেবে ক্রেতাদের কাছে পণ্য পৌঁছে দিয়েও স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। ই-কমার্সের যাত্রা বাংলাদেশে খুব বেশি দিনের না হলেও পরিসংখ্যান বলছে, এই অল্প সময়ের মধ্যেই বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় আড়াই হাজার ই-কমার্স সাইট রয়েছে এবং ফেসবুক বা এফ-কমার্সের মাধ্যমে অনলাইনে আরও প্রায় দুই লাখ উদ্যোক্তা ব্যবসা করছেন।

ই-কমার্স সাইটগুলো সারা দেশে ডিজিটাল ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। অনলাইনে অর্ডার থেকে শুরু করে অনলাইন পেমেন্ট এবং সময়মতো পণ্য ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে ই-কমার্স সাইটগুলো সাফল্যের প্রমাণ রাখছে। এতে বিক্রেতাদের জন্য পণ্য পৌঁছে দেওয়া যেমন আরও সহজ হয়ে উঠেছে, তেমনি ক্রেতারাও স্বাচ্ছন্দ্যে অনলাইন শপিংয়ের অভিজ্ঞতা নিতে পারছেন।

যেমনটি প্রথমেই বলছিলাম, নতুন যেকোনো উদ্যোগেই সম্ভাবনার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জও রয়েছে। অপেক্ষাকৃত নতুন একটি খাত হিসেবে ই-কমার্সকেও এই চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে এ ক্ষেত্রে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোকে আরও সচেতন হতে হবে। কেননা, যেকোনো খাতের মতো এই সম্ভাবনাময় খাতেও কিছু স্বার্থান্বেষী মহল বা দুষ্টচক্র অস্বচ্ছ উপায়ে সুবিধা গ্রহণ করতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে ছাপা পত্রিকায় ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমরা সে রকম আলামতই দেখতে পাচ্ছি। 

আকাশচুম্বী ছাড় ও অবিশ্বাস্য অফার দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতে ক্রেতাদের অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অভিযোগের তির এখন ই-কমার্সের দিকে। ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোকে এসব অভিযোগ ও চ্যালেঞ্জকে সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে এবং নিজেদের সাধ্যমতো সেরা সেবা প্রদান অব্যাহত রাখতে হবে। খাতসংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্মগুলোকে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রথমেই ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করা প্রয়োজন। এতে ক্রেতারা প্রতারকদের কার্যক্রমে বিভ্রান্ত না হয়ে সঠিক মার্কেটপ্লেস থেকে সচেতনভাবে কেনাকাটা করতে উদ্বুদ্ধ হবে। ক্রেতাদের আস্থা অর্জনে তাদের চাহিদা ও ট্রেন্ড অনুযায়ী সেবা প্রদান করা জরুরি।

সাম্প্রতিক সময়ে উদ্ভূত সমস্যা নিরসনে, অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোর মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। যেহেতু অনলাইনে কেনাকাটার সময় ক্রেতাদের সরাসরি পণ্য দেখেশুনে হাতে নিয়ে দেখার সুযোগ নেই, তাই নিজেদের প্ল্যাটফর্মে পণ্যের বিস্তারিত বর্ণনা ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ রাখতে হবে, যেন ক্রেতারা সেটি পড়ে পণ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেতে পারেন। পাশাপাশি এটিও নিশ্চিত করা প্রয়োজন যে বর্ণনায় যেমন দেওয়া আছে, ক্রেতারা যেন ঠিক তেমন পণ্যই হাতে পান।

সরাসরি বাজারে গিয়ে কেনাকাটার সঙ্গে অনলাইনে কেনাকাটা করার তফাত হলো বাজারে ক্রেতারা পণ্য নিয়ে তারপর মূল্য পরিশোধ করেন, কিন্তু অনলাইনে প্রি-পেমেন্টের ক্ষেত্রে ক্রেতারা আগেই মূল্য পরিশোধ করেন, পরে পণ্য হাতে পান। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পণ্য হাতে পাওয়ার আগপর্যন্ত ক্রেতাদের মধ্যে কিছুটা অস্বস্তি বা দুশ্চিন্তা থাকতে পারে। পণ্য ডেলিভারি দিতে কিছুটা দেরি হলেও তাদের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়তে পারে। এ জন্য অবশ্যই বিক্রেতাদের সমৃদ্ধ ও উন্নত ডেলিভারি ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ ছাড়া অর্ডারের সময়ই ডেলিভারির দিনক্ষণ এবং ডেলিভারি ট্র্যাকিংয়ের ব্যবস্থা রাখলে ক্রেতাদের দুশ্চিন্তা ও উৎকণ্ঠা কমবে।

অনেক ক্ষেত্রে পণ্য ডেলিভারির সময় নানা কারণে পণ্যের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বা বিঘ্ন ঘটতে পারে, এ ক্ষেত্রে বিক্রেতাকে অবশ্যই ত্বরিত উপায়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। পণ্য কেনার আগেই স্পষ্টভাবে রিটার্ন পলিসি সম্পর্কে ক্রেতাদের অবহিত করতে হবে, যেন ক্রেতা যদি কোনো পণ্য ফিরিয়ে দিতে চান বা এর পরিবর্তে অন্য পণ্য নিতে চান, সঠিক উপায়ে তা সমাধান করা যায়।

সাম্প্রতিক সময়ে ই-কমার্স মার্কেটপ্লেসগুলোর মধ্যে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য বিশাল অঙ্কের ছাড় বা অবিশ্বাস্য অফার দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এতে বাজারের স্বাভাবিক শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয় এবং ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই ভোগান্তির শিকার হন। দ্রুত বড় হওয়ার জন্য এমন পদ্ধতি অনুসরণ না করে পরিমিত ছাড় এবং ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখেই মার্কেটপ্লেসগুলোকে নিজেদের কৌশল ও কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন।

মনে রাখতে হবে, যেকোনো ব্যবসায় সফল হতে হলে সবার আগে প্রয়োজন ক্রেতাসন্তুষ্টি। তাই ক্রেতাসন্তুষ্টি অর্জনে এবং সবার মধ্যে ই-কমার্স সম্পর্কে আস্থা ফিরিয়ে আনতে প্ল্যাটফর্মগুলোকে মানসম্মত পণ্য, উন্নত ডেলিভারি ব্যবস্থা, কার্যকর রিটার্ন পলিসি ও স্মুথ অনলাইন পেমেন্ট নিশ্চিত করা আবশ্যক।

ই-কমার্সের বিকাশে বিক্রেতাদের পাশাপাশি ক্রেতাদেরও কিছু বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। যেকোনো পণ্য ক্রয়ের আগে সে পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া প্রয়োজন। বিক্রেতাদের ডেলিভারি পদ্ধতি, রিটার্ন পলিসি, পেমেন্ট পদ্ধতি ইত্যাদি সব বিষয়ে যথাযথভাবে জেনে পণ্য অর্ডার দেওয়া জরুরি। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো চটকদার বিজ্ঞাপন বা আকাশকুসুম ছাড় বা অফার দেখে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এমন অবিশ্বাস্য অফারের ক্ষেত্রে প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই এ ক্ষেত্রে ক্রেতাদের সতর্ক থাকা উচিত।

দ্রুত বর্ধনশীল সম্ভাবনাময় ই-কমার্স খাত সাধারণ মানুষের কেনাকাটা আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তোলার পাশাপাশি লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। তাই সাম্প্রতিক সময়ে এ খাতকে ঘিরে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোর পাশাপাশি ক্রেতা, বিক্রেতা, সরকারসহ খাতসংশ্লিষ্ট অংশীজনদের দায়িত্বশীল হতে হবে এবং এ খাতের বিকাশে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।

সৈয়দ মোস্তাহিদল হক দারাজ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক

মতামত থেকে আরও পড়ুন

ই কমার্স অনলাইন কেনাকাটা ব্যবসা অনলাইন ব্যবসা

আপনার মন্তব্য লিখুন...