Oops! It appears that you have disabled your Javascript. In order for you to see this page as it is meant to appear, we ask that you please re-enable your Javascript!
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৩  |  Thursday, 30 March 2023  |  এখন সময়:

Advertise@01680 34 27 34

আইন প্রয়োগকারীদের ভবনেরই ছাড়পত্র নেই


অনলাইন ডেস্কঃ

প্রকাশিত:   ১০:০৩ এএম, শুক্রবার, ১৭ মার্চ ২০২৩   আপডেট:   ১০:০৩ এএম, শুক্রবার, ১৭ মার্চ ২০২৩  
আইন প্রয়োগকারীদের ভবনেরই ছাড়পত্র নেই
আইন প্রয়োগকারীদের ভবনেরই ছাড়পত্র নেই

সেন্ট মার্টিনে অবৈধভাবে শুধু বেসরকারি হোটেল-রিসোর্টই নির্মাণ করা হয়নি, সেখানে স্থাপনা করেছে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীও। সরকারিভাবে নির্মিত এসব স্থাপনার কোনো কোনোটিতে সরকারি কর্মকর্তারা বেড়াতে গিয়ে থাকেন। আবার কোনো ক্ষেত্রে তা সাধারণ মানুষের কাছে ভাড়াও দেওয়া হয়।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ একটি প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ)। ১৯৯৯ সালে দ্বীপটিকে ইসিএ হিসেবে ঘোষণা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালার ১৯ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রচলিত বিধিমালা, প্রবিধান মালা, পরিপত্র বা আইনগত দলিলে ভিন্নতর যা কিছুই থাকুক না কেন, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকাভুক্ত কোনো ভূমির শ্রেণি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের সম্মতি নিতে হবে।’

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, স্থাপনা নির্মাণ মানে হলো ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন। এ কারণে সেন্ট মার্টিনে নির্মিত হোটেল-রিসোর্ট অবৈধ। একইভাবে সরকারি সংস্থার নির্মাণ করা স্থাপনাও নিয়মবহির্ভূত। দ্বীপটিতে বহুতল ও একতলা মিলিয়ে সেখানে হোটেল, রিসোর্ট, কটেজ ও রেস্তোরাঁর সংখ্যা ২৩০টির বেশি। এর মধ্যে গত দুই বছরে তৈরি হয়েছে অন্তত ১৩০টি। এখন নির্মাণকাজ চলছে ৩০টির বেশি রিসোর্ট ও কটেজের। পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, একটি পর্যটন স্থাপনা নির্মাণেও তাদের ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। তেমনি সরকারি সংস্থাও ছাড়পত্র নেয়নি বলে জানা গেছে।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপে জেলা প্রশাসনের স্থাপনার নাম ‘দ্বীপ ব্যবস্থাপনা ও তথ্য কেন্দ্র, সেন্ট মার্টিন’। তবে সেটি আসলে বাংলো। বাংলোর ভেতরে ঘরগুলো তৈরি করা হয়েছে কাঠ দিয়ে। ছাউনি খড়ের। তবে প্রতিটি ঘরের সঙ্গে যুক্ত শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে ইট, বালু ও সিমেন্ট ব্যবহার করে। কক্ষ আছে ১০টি।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, দ্বীপের পূর্ব পাশের সৈকতে রিসোর্টের মতো সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন বাংলোটি চালু হয় গত ডিসেম্বরে। সেখানে আগে জেলা পরিষদের একটি যাত্রীছাউনি ছিল। সেটি ভেঙে তৈরি করা হয় বাংলোটি। এটি নির্মাণ করা হয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড ও টেকনাফ উপজেলা প্রশাসনের অর্থায়নে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আরও জানান, সরকারের কর্মকর্তারা বেড়াতে গেলে এই বাংলোতে থাকেন। প্রতি রাত থাকার জন্য কক্ষের ভাড়া লাগে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা, যা অন্য রিসোর্টে তিন থেকে চার গুণ বেশি।

দ্বীপ ব্যবস্থাপনা ও তথ্যকেন্দ্রের নাম দিয়ে সেন্ট মার্টিনে স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র রয়েছে কি না, জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বাংলারসময়কে বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। কারণ, সেই সময় তিনি দায়িত্বে ছিলেন না।

সেন্ট মার্টিনে স্থাপনা নির্মাণের সময় টেকনাফে ইউএনওর দায়িত্বে ছিলেন পারভেজ চৌধুরী, যিনি এখন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব। এই কর্মকর্তা বাংলারসময়কে বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে স্থাপনা নির্মাণের সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ওভাবে নেওয়া হয়নি। তাদের স্থাপনা যেকোনো সময়ে অপসারণ করা যাবে। তিনি বলেন, পাকা ভবন করলে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিতে হয়। অনেকেই সেখানে ছাড়পত্র ছাড়া ভবন করেছেন। পুলিশের তৈরি করা তিনতলা ভবনেরও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই।

পারভেজ চৌধুরী আরও বলেন, জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় বেদখল খাসজমি উদ্ধার করার পর তাতে দ্বীপ ব্যবস্থাপনা ও তথ্যকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছিল।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের উত্তর সৈকতে দুই বছর আগে তৈরি হয় তিনতলা সেন্ট মার্টিন পুলিশ ফাঁড়ি ভবন। এটিও রিসোর্টের আদলে তৈরি। নাম দেওয়া হয়েছে পুলিশ অফিসার্স মেস। ভবনটিতে ১০টি কক্ষ রয়েছে। এসব কক্ষে সেন্ট মার্টিনে বেড়াতে যাওয়া পুলিশ কর্মকর্তারা থাকেন। আবার সাধারণ মানুষের কাছেও ভাড়া দেওয়া হয়। পুলিশের কোনো কর্মকর্তার বরাত (রেফারেন্স) থাকলে বিশেষ ছাড় পাওয়া যায়। প্রতিটি কক্ষের ভাড়া ৮ থেকে ১৫ হাজার টাকা।

পুলিশ অফিসার্স মেসের কক্ষ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ শামীম বাংলারসময়কে বলেন, পুলিশ ফাঁড়ি ভবনে রাতযাপন নিরাপদ মনে করে অনেকে আগ্রহ দেখান। কিন্তু যাকে–তাকে কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয় না।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ভবন নির্মাণের পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়নি। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সেন্ট মার্টিন পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক (ইনচার্জ) সুদীপ্ত শেখর ভট্টাচার্য বাংলারসময়কে বলেন, ফাঁড়িতে থাকা পুলিশের সদস্যরা দ্বীপের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার কাজেই ব্যস্ত থাকেন। কক্ষ ভাড়া কিংবা কে থাকে না থাকে, তা দেখাশোনা করেন অন্য লোক।

ছাড়পত্র ছাড়া ভবন নির্মাণে পিছিয়ে নেই কক্সবাজার জেলা পরিষদও। তারা করেছে দোতলা একটি ডাকবাংলো। বাংলোটি তৈরি হয় এক যুগ আগে। সেটি তিন বছর আগে ইজারা দেওয়া হয়। এর তত্ত্বাবধায়ক নুর কামাল কাজল বাংলারসময়কে বলেন, দ্বিতীয় তলায় কয়েকটি কক্ষ ভাড়া দিয়ে টাকা আয় হচ্ছে। কক্ষের ভাড়া দুই হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা।

দ্বীপের পূর্বপাড়ায় নির্মিত হচ্ছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের দোতলা একাধিক ভবন। গত ৭, ৮, ৯ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি ঘুরে দ্বীপের পূর্ব সৈকতের একাধিক স্থানে দেখা গেছে বস্তাভর্তি বালু রাখা। আরও রয়েছে বিপুলসংখ্যক ইট। বালুর বস্তা ও ইট আনা হয়েছে টেকনাফ থেকে ট্রলারে করে। লোকজন ঠেলাগাড়ি–বোঝাই করে বালুর বস্তা ও ইট নিয়ে যাচ্ছেন। কোথায় নেওয়া হচ্ছে, তা তদারকির কেউ নেই।

দ্বীপের মাঝপাড়ার বাসিন্দা আবদুল মালেক বাংলারসময়কে বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে নির্মাণসামগ্রী আনতে জেলা প্রশাসনের অনুমতি লাগে। সরকারি দপ্তরের ভবন নির্মাণের বিপরীতে ঠিকাদারেরা যে পরিমাণ ইট–সিমেন্ট–বালু টেকনাফ থেকে ট্রলারে সেন্ট মার্টিন নিয়ে আসেন, তার কিছু অংশ চড়া মূল্যে স্থানীয় হোটেল-রিসোর্টের মালিকদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। পরে সেসব নির্মাণসামগ্রী দিয়ে দ্বীপের যত্রতত্র রিসোর্ট-কটেজসহ নানা স্থাপনা নির্মিত হয়।

অপরাধ থেকে আরও পড়ুন

অপরাধ বিশেষ সংবাদ জীব বৈচিত্র্য প্রাকৃতিক পরিবেশ সেন্ট মার্টিন সংকটাপন্ন

আপনার মন্তব্য লিখুন...