ঢাকা, সোমবার ১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৭ | এখন সময়:

Advertise@01680 34 27 34

স্বপ্নগুলো তোমার মতো: সাইদুস খালেদ সুমন


বিনোদন ডেস্কঃ

প্রকাশিত:   ১১:০৯ পিএম, বুধবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট:   ১১:০৯ পিএম, বুধবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১  
স্বপ্নগুলো তোমার মতো: সাইদুস খালেদ সুমন
স্বপ্নগুলো তোমার মতো: সাইদুস খালেদ সুমন

সাইদুস খালেদ সুমন। তিনি বেজবাবা নামেই বেশি পরিচিত। অর্থহীন ব্যান্ডের এই দলনেতা প্রায় পাঁচ মাস ধরে চিকিৎসার জন্য ছিলেন দুবাই ও ব্যাংক। সম্প্রতি দেশে ফিরেই শুরু করেছেন নতুন গানের কাজ। নতুন গান ও অন্যান্য বিষয়ে নন্দনের সঙ্গে একান্ত আলাপে বসেছিলেন এই সংগীতশিল্পী। সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরেছেন কবীর সোহাগ

- পাঁচ মাস পর দেশের মাটিতে ফিরলেন। কেমন লাগছে?

-- পুরোপুরি সাড়ে পাঁচ মাস পর দেশে ফিরলাম। ভালো লাগছে। সত্যি বলতে কি, একটানা এতদিন দেশের বাইরে কখনও থাকিনি। যখন দেশে পা রাখলাম, তখন কী যে শান্তি পেয়েছি, বলে বোঝানো যাবে না।

- শুরুতে আপনি চিকিৎসার জন্য ব্যাংকক গেলেন। পরে সেখান থেকে দুবাই গিয়েছিলেন কেন?

-- আমার মেরুদণ্ডের চিকিৎসার জন্য কিন্তু দুবাই যাইনি। দুবাই গিয়েছিলাম অন্য কারণে। কয়েক মাস আগে আমার বাবা বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে চিকিৎসার জন্য দুবাই নেওয়া হয়। সে সময় আমি ব্যাংককে চিকিৎসা নিচ্ছি। অন্যদিকে বাবা দুবাইয়ে। সব মিলিয়ে পরিবারের ওপর দিয়ে নানা ঝড় বয়ে যাচ্ছিল। আপনারা জানেন, নিজেকে খুব একটা পাত্তা দিই না। জীবনে এত মেজর সার্জারি করেছি হাসিমুখে। কিন্তু আব্বা যখন গুরুতর অসুস্থ, তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, দুবাই যাব। সেই ভাবনা থেকেই যাওয়া।

- আপনার শরীরের বর্তমান অবস্থা কেমন?

-- আগের চেয়ে অনেকটা ভালো। গত আড়াই বছর আমার জীবনে অনেক খারাপ সময় গেছে। আমার মেরুদণ্ডের অবস্থা এত খারাপ ছিল, তিন থেকে চার মিনিটের বেশি বসে থাকতে পারতাম না। ফলে বেশিরভাগ সময় শুয়েই কাটাতে হয়েছে, যা ছিল খুব কষ্টকর। কারণ আমি আউটগোয়িং মানুষ। সময়-সুযোগ পেলেই ছুটে বেড়িয়েছি, সেই আমি ঘরে বন্দি! এর চেয়ে কষ্ট আর কী হতে পারে! গত কয়েক মাসের চিকিৎসায় এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো আছি।

- চিকিৎসকরা সর্বশেষ কী বলেছেন?

-- চিকিৎসকরা বলেছেন, তুমি এখন হাঁটতে পারবে, বসে থাকতে পারবে। কিন্তু তোমার মেরুদণ্ড এখনও পুরোপুরি ঠিক হয়নি। বলা যেতে পারে, ডাক্তাররা জোড়াতালি দিয়ে এ অবস্থানে নিয়ে এসেছেন। এ ছাড়া আমার মেরুদণ্ডের নিচের দিকে কয়েকটি হাড় ভাঙা। ব্যাংককে গাড়ি অ্যাক্সিডেন্টের পর মেরুদণ্ডের নিচে একটা হাড়ের টুকরা পড়েও আছে। সেটা সার্জারি করতে হবে।

- এ সার্জারি কোথায় করাবেন?

-- জার্মানিতে এ ধরনের সার্জারি ভালো হয়। কিন্তু জার্মানির যে হাসপাতালে সার্জারি করব, সেখানে এখন কভিড রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে জার্মানি যাব।

- আরও কয়টি সার্জারি করাতে হবে?

-- আরও দুটি। একটা লোয়ার ব্যাকে, আরেকটা আপার ব্যাকে। কভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগে লোয়ার ব্যাকের সার্জারি করাব। কারণ চিকিৎসকরা বলেছেন, আপার ব্যাকের সার্জারিটি দুই বছর পর করলেও চলবে। লোয়ার ব্যাকের সার্জারি সাকসেসফুল হলে আমি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।

- দীর্ঘ সময় ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। এবারও কী ...

-- এবার যখন চিকিৎসার জন্য ব্যাংকক গেলাম, তখন অনেকেই মনে করেছেন, ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে গিয়েছি। কিন্তু আমার জীবনে ক্যান্সারের চ্যাপ্টার অনেক আগেই শেষ হয়েছে। এবার গিয়েছিলাম মেরুদণ্ডের চিকিৎসা করাতে।

- মানসিকভাবে অনেক শক্ত মানুষ আপনি। কিন্তু এবারের আপনাকে ঠিক ...

-- দেখুন, এবার যা হয়েছে, করোনার কারণে চিকিৎসকের কাছে যেতে পারছি না। সত্যি বলতে কি, এই সময়টা বিছানায় থাকতে থাকতে মানসিকভাবে অনেক ভেঙে পড়েছিলাম। আমার জীবনে কখনোই এ রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি। ২০১২ সালে যখন ক্যান্সার ধরা পড়ে, তখন প্রথম সাত দিন ভয় পেয়েছিলাম। তারপর মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেছিলাম। যতবারই ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য গিয়েছি, প্রতিবারই হালকাভাবে নিয়েছি। মনে হয়েছে, আরে, এটা কোনো ব্যাপারই না! অপারেশন থিয়েটারে ঢুকেও মজা করেছি। আমাকে দেখে চিকিৎসকরা বলতেন, এত সিরিয়াস অবস্থায় তুমি হাসছ! জীবনে তোমার মতো এমন রোগী পাইনি। কিন্তু এবার আমার মতো একজন মানুষ পঙ্গু হয়ে বাড়িতে শুয়ে আছে- এটা মেনে নিতে পারছিলাম না।

- অসুস্থ অবস্থায়ও স্টেজ শো করেছিলেন?

-- হ্যাঁ, ২০২০ সালে ফুয়াদের সঙ্গে জয়বাংলা কনসার্টে একটা গান করেছি। তখন আমার অবস্থা খারাপ ছিল। ফুয়াদ আমাকে মেসেজ দিয়ে জানতে চায়, আমি গাইব কিনা। বললাম, গাইব। এর পর মিনিভ্যানে ক্লিনিকে গিয়ে পেইনকিলার ইনজেকশন নিয়ে আর্মি স্টেডিয়ামে যাই। কোনো রকমে একটা গান গেয়ে আবার বাসায়। ফেরার পর আমার অবস্থা অনেক খারাপ হয়েছিল। কিন্তু কাউকে বুঝতে দিইনি।

- এখন আপনার সময় কাটছে কী করে?

-- পরিবারকে সময় দিচ্ছি। এখন পৈতৃক বাড়িতে আছি। এখানে আমার ছোট একটি স্টুডিও আছে। সেখানেই নতুন গানের কাজ করছি, যা খুব শিগগিরই ইউটিউবে প্রকাশ করব। মিউজিশিয়ান হিসেবে অর্থহীনের সদস্যরাই গানগুলো করছে। তবে ব্যান্ডের অ্যালবামের ব্যাপারে এখনও কিছু ভাবিনি।

- আপনার অগণিত ভক্ত-শ্রোতা নিয়ে কিছু বলুন...

-- ভক্তরা আছে বলেই আমি আছি। তারা না থাকলে আজ বেজবাবা হতে পারতাম না। তাই তো ভক্তদের আমার গাওয়া 'স্বপ্নগুলো তোমার মতো' গানের মতো বলি, সবাই নিজেদের দারুণ সব স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকবেন। কারণ স্বপ্ন ছাড়া বেঁচে থাকা যায় না। আমিও বেঁচে আছি হাজারো স্বপ্ন নিয়ে।

আপনার মন্তব্য লিখুন...