ঢাকা, রবিবার, ২৮ মে, ২০২৩  |  Sunday, 28 May 2023  |  এখন সময়:

Advertise@01680 34 27 34

মিথ্যে করে হলেও হাসুন


অনলাইন ডেস্কঃ

প্রকাশিত:   ০৮:০৮ এএম, রবিবার, ২৩ আগস্ট ২০২০   আপডেট:   ০৮:০৮ এএম, রবিবার, ২৩ আগস্ট ২০২০  
মিথ্যে করে হলেও হাসুন
মিথ্যে করে হলেও হাসুন

সুদূর প্রবাসে আজি কেন রে কি জানি/ কেবল পড়িছে মনে তার হাসিখানি।’ হাসির শক্তি এমনই। তাৎক্ষণিকতার মুখোশে এলেও সত্যিকারের হাসি অমরত্বের বরপ্রাপ্ত। ফলে ‘কড়ি ও কোমল’-এর রবি ঠাকুরের পক্ষে সুদূর প্রবাসে গিয়েও সেই হাসিমুখ ভোলা সম্ভব হয় না। শুধু কবিগুরু কেন, এ কথা তো সবার জন্যই সত্য। সাধে কী বলে ‘ভুবন ভোলানো হাসি’! তা কেমন সেই ‘ভুবন ভোলানো হাসি’? সে খোঁজ নেওয়ার আগে একবার অন্তত হেসে ফেলুন যথাযথ। বিজ্ঞানীরা অন্তত তেমনটিই বলছেন। তাঁরা বলছেন, সত্যিকারের হাসিই বিশ্বজয় করে।

বাংলা চলচ্চিত্রের অপ্রতিদ্বন্দ্বী জুটি উত্তম-সুচিত্রার কথা ভাবুন। কী মনে পড়ে সবার আগে? হাসিটাই নিশ্চয়। শুধু এ দুজন কেন, মোহন হাসিতে দুনিয়া মাত করা এমন আরও অনেকের নাম বলা যাবে। সে না হয় থাক। বরং তাকানো যাক হাসিতে দুনিয়া মাত হয় কেন, তার দিকে।

হাসিমুখের মানুষ ইতিবাচক হয় বা হাসিতেই একজন সুন্দর হয়ে ওঠে—এমন ধারণা আজকের নয়। এ জন্য বিরাট বিদ্যাধারী হওয়ারও প্রয়োজন নেই। তারপরও এই ধারণা বা দাবির বৈজ্ঞানিক ভিত্তিটি খোঁজার চেষ্টা জারি থেকেছে। আর সম্প্রতি তার সূত্রটি খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, সত্যি সত্যিই হাসি একজন মানুষকে তুলনামূলক ইতিবাচক হতে সাহায্য করে। আর এ কাজটি সে করে মুখের কিছু পেশি নড়াচড়া করার মাধ্যমেই।

কোভিড-আক্রান্ত এই সময়ে হতাশা ও উদ্বেগই যখন একমাত্র সত্য হয়ে উঠেছে, তখন হাসিমুখের বিশ্বজয়ের এই খবরের মতো কাঙ্ক্ষিত আর কী হতে পারে? মহামারি ও অর্থনৈতিক সংকটের এই দুঃসময়ে যদি হাসিই পারে জীবনীশক্তি বাড়াতে, তবে হাসাই তো উত্তম। নিজের জন্য এবং প্রিয়জনের জন্যও।

সম্প্রতি এক্সপেরিমেন্টাল সাইকোলজি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধে অবশ্য বলা হয়েছে, মেকি হাসির চেয়ে, সত্যিকারের হাসিই ইতিবাচক। মেকি হাসি তো শুধু ঠোঁট ধরে রাখে।

দু ঠোঁটের স্ফীতিতেই শুধু যে হাসির অস্তিত্ব, তার তো সীমান্ত টানা। আর সীমান্তে আবদ্ধ থেকে কী করে বিশ্বজয় সম্ভব? মেকি হাসিতে মুখের যতটা পরিবর্তন হয়, তা দু পাটি দাঁতের ফাঁকে কলম এঁটে দিলেও হয়। বিজ্ঞানীরা ঠিক এ কাজটিই করেছেন। তাঁরা এ ধরনের হাসির ফলে মুখের পেশির নড়াচড়ার মাত্র গণনা করে দেখেছেন। একই সঙ্গে সত্যিকারের হাসির কারণে সারা শরীরের বিভিন্ন স্থানের পেশির যেসব পরিবর্তন হয়, তার মাত্রাও নির্ণয় করেন। একই সঙ্গে এ দুই ক্ষেত্রে শরীর ও মনের ওপর পড়া প্রভাবের পার্থক্যটিও তাঁরা পর্যবেক্ষণ করেছেন। এতে দেখা গেছে, মেকি হাসির চেয়ে সত্যিকারের হাসি অনেক বেশি ইতিবাচকতা ছড়ায় শরীর ও মনে।

সম্প্রতি এক্সপেরিমেন্টাল সাইকোলজি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধে অবশ্য বলা হয়েছে, মেকি হাসির চেয়ে, সত্যিকারের হাসিই ইতিবাচক। মেকি হাসি তো শুধু ঠোঁট ধরে রাখে।

গবেষকদের মতে, সত্যিকারের হাসি শুধু মুখের অভিব্যক্তিরই বদল ঘটায় না। এটি সারা শরীরেও এক ধরনের ইতিবাচক অভিব্যক্তি ছড়িয়ে দেয়, যার সরাসরি প্রভাব রয়েছে মনের ওপর।

গবেষক দলের প্রধান এবং মানব ও কৃত্রিম বোধ বিশেষজ্ঞ সাউথ অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. ফার্নান্দো মারমোলেজো-রামোস বলছেন, এই গবেষণার মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক জানা গেছে। রামোস বলেন, ‘যখন আপনার শরীরের পেশি বলবে যে, আপনি সুখী, তখন সারা দুনিয়ার প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সত্যি সত্যি যখন আপনি হাসেন, তখন এই ইতিবাচকতার মাত্রা বেড়ে যায়।’

গবেষকেরা বলছেন, সত্যিকারের হাসি যদি নাও হাসতে পারেন, তবে মিথ্যে করে হলেও হাসার চেষ্টা করুন। কারণ, মেকি হাসিতে যতটা পেশির নড়াচড়া হয়, তা অ্যামিগডালাকে উদ্দীপ্ত করে। এই অ্যামিগডালাই হলো মস্তিষ্কের আবেগীয় কেন্দ্র। উদ্দীপ্ত অ্যামিগডালা তখন স্নায়ুতে এক ধরনের বার্তা পাঠায়, যাতে ইতিবাচক আবেগ তৈরি হয়। মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অত্যধিক।

তাই যতক্ষণ সত্যিকারের হাসিটি হাসতে না পারছেন, মিথ্যা করে হলেও হাসুন। একদিন ঠিক যথাযথ হাসিটি হাসতে পারবেন। আর তখনই শরীর ও মনকে দেওয়া যাবে সেই ইতিবাচকতার মৃতসঞ্জীবনী, যার সামনে কোভিড-১৯ তো দূর, জগতের সব ঝুঁকি ও সংশয় ম্লান হয়ে যায়। দুনিয়ার পাঁকে গোমড়ামুখে ডুবে যাওয়ার বদলে, তার দিকে তাকিয়ে তীব্র কটাক্ষে হাসুন। দেখবেন গোটা দুনিয়া আপনার সামনে গোল হয়ে বসে আছে সবিস্ময়ে।

আপনার মন্তব্য লিখুন...