বছরে ৬ গোল করা স্ট্রাইকারই এখন বার্সায় জাভির একমাত্র ভরসা
ক্রীড়া ডেস্কঃ
প্রকাশিত: ০৬:১২ এএম, শুক্রবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২১ আপডেট: ০৬:১২ এএম, শুক্রবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২১
বছরে ৬ গোল করা স্ট্রাইকারই এখন বার্সায় জাভির একমাত্র ভরসা
লিওনেল মেসি না থাকায় বার্সেলোনা ভীষণ ঝামেলায় পড়বে, সেটা অনুমান করে নিতে কারও কষ্ট হয়নি। কিন্তু ঝামেলাটা এত বেশি হবে, তা কে ধারণা করতে পেরেছিল! এমনকি কিংবদন্তি মিডফিল্ডার জাভি হার্নান্দেজকে কোচ করে ফিরিয়ে আনার পরও বার্সার ঝামেলা কাটছেই না!
বার্সার এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় ঝামেলার নাম—গোল করা! একে তো বার্সা গোল পাচ্ছে না, তার ওপর চোটে এমন অবস্থা যে বার্সার সুস্থ-সবল স্ট্রাইকারই এই মুহূর্তে আছেন কেবল একজন! দুই দিন আগে চ্যাম্পিয়নস লিগে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায়ের লজ্জায় পড়া বার্সার দুর্দিন যেন কাটছেই না।
নতুন করে বার্সার দুর্দশা সামনে আসছে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে পড়া তরুণ ফরোয়ার্ড আনসু ফাতির চোটের পুনর্বাসনে বিলম্বের কারণে। ১৯ বছর বয়সী স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড আগামী বছরের আগে আর মাঠে ফিরতে পারছেন না, এমনটাই জানিয়েছে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম।
এর মধ্যে বার্সা কোচ জাভির কপালে চিন্তার ভাঁজ বাড়িয়েছে গত বুধবার চ্যাম্পিয়নস লিগে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে ডাচ ফরোয়ার্ড মেম্ফিস ডিপাইয়ের চোট পাওয়া। সব মিলিয়ে এমনই অবস্থা যে জাভির হাতে এখন স্বীকৃত স্ট্রাইকার বলতে আছেন শুধু এই মৌসুমে সেভিয়া থেকে ধারে আসা ডাচ স্ট্রাইকার লুক ডি ইয়ং। যিনি ২০২১ সালে সব মিলিয়ে গোল করেছেন মাত্র ৬টি!
এমনিতেই বার্সা প্রতিপক্ষের গোলপোস্টের সামনে ভুগছে। গত নভেম্বরে জাভি কোচ হয়ে আসার পরও এ দিকটায় আর উন্নতি হয়নি কাতালানদের। এ পর্যন্ত জাভির অধীনে পাঁচ ম্যাচ খেলেছে বার্সা, এই পাঁচ ম্যাচে গোল পেয়েছে মাত্র ৪টি। এর মধ্যে লিগে ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে ম্যাচেই এসেছে ৩ গোল, বাকি চার ম্যাচে গোল মাত্র একটি!
চ্যাম্পিয়নস লিগে জাভির অধীনে দুই ম্যাচে কোনো গোল না পাওয়াও বার্সার এত তাড়াতাড়ি চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায়ের একটা কারণ। বেনফিকার বিপক্ষে গোলশূন্য ড্রয়ের পর গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বুধবার বায়ার্নের মাঠে ৩-০ গোলে হেরেছে বার্সা।
এর বাইরে লিগে তিন ম্যাচে ভিয়ারিয়ালের মাঠে ৩-১ গোলের জয় বাদ দিলে কোনো ম্যাচেই তেমন আলো ছড়াতে পারেনি জাভির বার্সেলোনা। কিংবদন্তি মিডফিল্ডার কোচ হয়ে ফেরার পর প্রথম ম্যাচে এসপানিওলের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয় এসেছিল পেনাল্টি থেকে মেম্ফিস ডিপাইয়ের গোলে। আর গত শনিবার তো নিজেদের মাঠে রিয়াল বেতিসের কাছে ১-০ গোলে হেরেই গেছে বার্সা।
একদিকে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে গ্রুপ পর্বেই বিদায় নিয়ে ইউরোপের দ্বিতীয় সারির মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট ইউরোপা লিগে নেমে যেতে হওয়ার লজ্জা, অন্যদিকে লিগে বার্সা আছে পয়েন্ট তালিকার ৭ নম্বরে। এই যখন অবস্থা, জাভি হয়তো আশায় ছিলেন আনসু ফাতিকে চোট থেকে ফিরে পাওয়ার। তার ওপর গত বুধবার বায়ার্নের মাঠে ডিপাই হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পেয়ে এক মাসের জন্য মাঠের বাইরে চলে যাওয়া ফাতির ফেরাটা রীতিমতো প্রয়োজন হয়েই দাঁড়িয়েছিল বার্সার জন্য।
মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা, বার্সার আরও দুই স্ট্রাইকার মার্টিন ব্রাথওয়েইট আর সের্হিও আগুয়েরোও চোট নিয়ে মাঠের বাইরে। আগুয়েরোর তো অনিয়মিত হৃদ্স্পন্দনের কারণে আর কখনো ফুটবলে ফেরা নিয়েই শঙ্কা আছে, ব্রাথওয়েইটও চোট কাটিয়ে ফিরতে ফেব্রুয়ারি মাস লেগে যেতে পারে।
স্প্যানিশ সংবাদপত্র এএস জানাচ্ছে, ডিপাই তো এক মাসের জন্য মাঠের বাইরে যাচ্ছেনই, ফাতির চোট থেকে ফিরে মাঠে নামার সময়ও মাসখানেক পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২০২২ সালের আগে আর মাঠে নামা হচ্ছে না ফাতির। তবে এর মধ্যে ব্যক্তিগত অনুশীলনে ফিরেছেন ফাতি, আপাতত দৌড়াদৌড়ি আর শারীরিক ফিটনেস ফিরে পাওয়ার অনুশীলন চলছে তাঁর।
ফাতির ব্যাপারে এর আগে বার্সার সিদ্ধান্ত ছিল ১৮ ডিসেম্বর এলচের বিপক্ষে ম্যাচে তাঁকে ফেরানো সম্ভব হতে পারে। কিন্তু জাভি আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, শুধু শতভাগ ফিট হলেই মাঠে ফিরবেন ফাতি। এখন জানা যাচ্ছে, ফাতির সেরে উঠতে প্রথমে চার থেকে ছয় সপ্তাহ লাগবে ধরা হলেও এখন ধরা হচ্ছে, আট সপ্তাহ লাগতে পারে তাঁর। এখন বার্সার পরিকল্পনা, ২ জানুয়ারি মায়োর্কার বিপক্ষে ম্যাচে ফেরা হতে পারে ফাতির।
গত ৬ নভেম্বর সেল্তা ভিগোর বিপক্ষে ম্যাচে হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পান ফাতি। এর কদিন আগেই তিনি ফিরেছিলেন ৭ মাস মেয়াদি চোট কাটিয়ে। ফাতির পাশাপাশি চোটের কারণে মাঠের বাইরে থাকা মিডফিল্ডার পেদ্রির পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার দিকেই এখন নজর বার্সার।
সে কারণে এখন অবস্থাটা দাঁড়িয়েছে এই যে জাভির অধীনে এখন পর্যন্ত মাত্র ৮ মিনিট মাঠে কাটানো লুক ডি ইয়ংই এখন গোল করার ক্ষেত্রে জাভির সবচেয়ে বড় ভরসা! মৌসুমে সব মিলিয়ে ১০ ম্যাচে গোল করেছেন ১টি।