ঢাকা, শুক্রবার, ৯ জুন, ২০২৩  |  Friday, 9 June 2023  |  এখন সময়:

Advertise@01680 34 27 34

নারী পুরুষ সমান হচ্ছে কলেজেও


পড়াশুনা ডেস্কঃ

প্রকাশিত:   ০৭:০৩ পিএম, শনিবার, ৭ মার্চ ২০২০   আপডেট:   ০৭:০৩ পিএম, শনিবার, ৭ মার্চ ২০২০  
নারী পুরুষ সমান হচ্ছে কলেজেও
নারী পুরুষ সমান হচ্ছে কলেজেও

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মেয়েরা আরও কয়েক বছর আগেই ছেলেদের ছাড়িয়ে গেছে। নতুন তথ্য বলছে, কলেজ পর্যায়েও (কলেজের একাদশ শ্রেণি থেকে ওপরের স্তর) এখন ছাত্রীদের অংশগ্রহণ ছাত্রদের প্রায় সমান হয়ে গেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো নারীরা বেশ পিছিয়ে।

সরকারের শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সর্বশেষ জরিপের তথ্য বলছে, কলেজে এখন নারীদের অংশগ্রহণের হার ৪৮ শতাংশের বেশি। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের হার ৩৬ শতাংশের একটু বেশি। অবশ্য এই স্তরেও অংশগ্রহণ বাড়ছে। আর চিকিৎসা, আইনসহ পেশাগত শিক্ষায় নারীরা এবার প্রথমবারের মতো পুরুষদের ছাড়িয়ে গেছেন। পেশাগত শিক্ষায় নারীর হার ৫৪ শতাংশ।

তবে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক (ভোকেশনাল) শিক্ষায় নারীরা বেশি পিছিয়ে। এই স্তরে নারীর অংশগ্রহণ ২৫ শতাংশের কিছু বেশি। কয়েক বছরে ধরেই এই হার ২৩ থেকে ২৫ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। ব্যানবেইসের একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০১৯ সালের এই জরিপের ফল শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পর কলেজেও ছাত্রদের প্রায় সমান নারী
পেশাগত শিক্ষায় ছাত্রীরা এগিয়েছেন
পিছিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরিতে

শিক্ষার নিচের স্তরে নারীদের অংশগ্রহণ বেশি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে তা কম হওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে বলে জাৃনালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ। তিনি বলেন, শিক্ষার নিচের স্তরে ছাত্রীদের অংশগ্রহণ বেশি থাকার বড় কারণ হলো উপবৃত্তি পাওয়া। অনেক অভিভাবক মনে করেন, মেয়েদের বাসায় থাকার চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠালে পড়াশোনার পাশাপাশি আর্থিকভাবেও লাভ হওয়া যায়। আর ছাত্রদের বিশেষ করে মাধ্যমিকের ছাত্রদের পরিবারের অনেকে মনে করেন, উপবৃত্তির চেয়েও অন্য কাজ করালে আরও বেশি আয় করা যায়। অন্য দিকে উচ্চশিক্ষায় খরচও ছাত্রীদের জন্য একটি বাধা। দ্বিতীয়ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের বাড়ি থেকে বহুদূরে অবস্থিত, সেখানে আবার আবাসিক সংকট আছে। এই বয়সে অনেক মেয়ের বিয়েও হয়ে যায়। মূলত এসব কারণে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষায় নারীরা এখনো অনেক পিছিয়ে।

উপবৃত্তির সুফল পড়ালেখায়

শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, নারীর শিক্ষার বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়ায় নব্বইয়ের পর থেকেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে নারীর অংশগ্রহণ বেশি করে বাড়তে থাকে। এতে উপবৃত্তি বড় ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেওয়া হয়। শ্রেণিভেদে শিক্ষার্থীদের ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকা পর্যন্ত উপবৃত্তি দেওয়া হয়।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব মো. আকরাম–আল–হোসেন বলেন, উপবৃত্তির কারণে ঝরে পড়া কমেছে এবং উপস্থিতি বেড়েছে।

মাধ্যমিকেও বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে উপবৃত্তি দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের মাধ্যমে স্নাতক (পাস) কোর্সের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়া হয়। বিভিন্ন শর্তের ভিত্তিতে ৩০ শতাংশ ছাত্রী ও ১০ শতাংশ ছাত্রকে এই উপবৃত্তি দেওয়া হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এখন স্নাতক (সম্মান) স্তরের শিক্ষার্থীদেৃরও উপবৃত্তির আওতায় আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়নবিষয়ক কর্মসূচি এসইডিপির অধীনে ৪০ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেওয়া হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, মাধ্যমিক স্তরে ২০০৮ সালে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার ছিল ৬১ শতাংশের মতো। সেটি কমে ২০১৮ সালে এসে সেটি হয় ৩৮ শতাংশের মতো। এর অন্যতম কারণ উপবৃত্তি। অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, অভিভাবকদের সচেতনতাও নারীশিক্ষা এগিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

সমতার যাত্রা

সরকারি ও বেসরকারি নানামুখী পদক্ষেপের কারণে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০১৫ সালের আরও কয়েক বছর আগেই বাংলাদেশ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ছাত্রছাত্রীর সমতা অর্জন হয়ে যায়। ২০১০ সালে প্রাথমিকে ছাত্রীদের অংশগ্রহণের হার দাঁড়ায় প্রায় ৫১ শতাংশে। তখন মাধ্যমিকে এই হার ছিল ৫৩ শতাংশ। বর্তমানে প্রাথমিকে ছাত্রীদের হার প্রায় ৫১ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে প্রায় ৫৪ শতাংশ। শিক্ষার এই দুই স্তরে নারী ও পুরুষের সমতার দিক দিয়ে ভর্তির বিষয়টি শুধু দেশের মধ্যেই নয়, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ‘বৈশ্বিক লিঙ্গবৈষম্য’ প্রতিবেদন বলছে, সারা বিশ্বেই শীর্ষ অবস্থানে আছে।

১০ বছর আগে কলেজে ছাত্রীদের হার ছিল ৪৫ শতাংশ। এবার সেটি বেড়ে প্রায় ছাত্রদের সমান হয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে এই হার ৩৬ শতাংশের মতো। বৈশ্বিক লিঙ্গবৈষম্য প্রতিবেদন বলছে, নারী ও পুরুষের সমতার দিক দিয়ে এই স্তরে ভর্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৭তম স্থানে।

শিক্ষক প্রশিক্ষণে নারীদের অংশগ্রহণের হার ৪৬ শতাংশ। আর মাদ্রাসার প্রাথমিক স্তর স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসায় ছাত্রছাত্রীর হার সমান। দাখিল থেকে কামিল পর্যন্ত ছাত্রীদের হার ৫৫ শতাংশ।

 সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ভালো দিক হলো, সংখ্যাগত দিক দিয়ে ছাত্রীদের অগ্রগতির ধারাটি অব্যাহত আছে। এ বিষয়ে সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপ যেমন আছে, তেমনি রাজনৈতিক অঙ্গীকারও আছে। তবে শিক্ষার সব স্তরে নারীদের এগিয়ে নেওয়াসহ গুণগত শিক্ষার জন্য এই খাতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন...