তাইওয়ানের বিরুদ্ধে চীন শক্তিপ্রয়োগ করলে পদক্ষেপ নেবে যুক্তরাষ্ট্র
অনলাইন ডেস্কঃ
প্রকাশিত: ১১:১১ পিএম, বুধবার, ১০ নভেম্বর ২০২১ আপডেট: ১১:১১ পিএম, বুধবার, ১০ নভেম্বর ২০২১
বুধবার (১০ নভেম্বর) নিউইয়র্ক টাইমস আয়োজিত একটি ফোরামে ব্লিংকিনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তাইওয়ান চীনের হামলার শিকার হলে যুক্তরাষ্ট্র কোনো পদক্ষেপ নেবে কিনা। জবাবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিয়মিত বিবৃতিরই পুনরাবৃত্তি করেন।
ব্লিংকিন বলেন, দ্বীপটি যাতে নিজেদের রক্ষা করতে পারে, নিজেদের আইন মেনে তা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে যুক্তরাষ্ট্র। একই সময়ে আমরা বলতে চাই, দ্বীপটিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আমরা একা নই। অনেক দেশ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। পাশাপাশি আমার মনে হয় এটা বলাও ন্যায্য হবে যে বিশ্বের ওই প্রান্তের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার প্রত্যয় কেবল আমাদের একারই নয়।
তিনি বলেন, অনেক দেশ আছে, ওই অঞ্চলভুক্ত এবং অঞ্চলটির বাইরেরও অনেক দেশ, যারা সেখানকার স্থিতাবস্থা বিঘ্নিত করার ক্ষেত্রে যে কোনো একতরফা পদক্ষেপকে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হিসেবে দেখবে; তেমন কিছু ঘটলে তারাও ব্যবস্থা নেবে।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চীন আক্রমণ চালালে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের প্রতিরক্ষায় এগিয়ে আসবে বলে মন্তব্য করে নিজের প্রশাসনের ভেতরেই ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের প্রতিনিধি দলের তাইওয়ান সফরকে এক-চায়না নীতির লঙ্ঘন বলে জানিয়েছে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বুধবার (১০ নভেম্বর) বেইজিং জানিয়েছে, তাইওয়ানের সঙ্গে সব ধরনের আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ অবশ্যই অতিসত্বর বন্ধ করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী শক্তির সঙ্গে মার্কিন যোগসাজশ এক বিপজ্জনক খেলা। যা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে।
সম্প্রতি চীন-তাইওয়ান উত্তেজনা বেড়েছে। গেল একবছর ধরে তাইওয়ান অভিযোগ করে আসছে, চীনা বিমান বাহিনী বারবার স্বশাসিত দ্বীপটির আকাশসীমা লঙ্ঘন করছে।
তাইওয়ানকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন প্রদেশ হিসেবে দাবি করছে চীন। কাজেই গণতান্ত্রিক দ্বীপটিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে শক্তিপ্রয়োগের ইচ্ছা উড়িয়ে দিচ্ছে না বেইজিং। কিন্তু তাইওয়ান নিজেকে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে দাবি করে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা সুরক্ষার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।
এদিকে তাইওয়ানের রাডারের পর্দায় ঝাঁকে ঝাঁকে চীনা যুদ্ধ বিমানের ভেসে উঠছে। দুই ভূখণ্ডের মধ্যে প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে। আর এভাবেই দ্বীপটিকে চাপে রাখছে বেইজিং। তাইপেকে মনস্তাত্ত্বিক চাপে রাখতে হাতিয়ার হিসেবে নতুন কৌশল ব্যবহা করছে চীন।
এতে আশঙ্কা করা হচ্ছে, যে কোনো একটি ভুলে হঠাৎ করেই মনস্তাত্ত্বিক লড়াই সত্যিকারের সর্বাত্মক যুদ্ধে পরিণত হতে পারে। ১৯৪৯ সালের গৃহযুদ্ধের পর থেকে চীনা আগ্রাসনের ভয়ে আছে স্বশাসিত দ্বীপটি।
চীন থেকে আসা ভয়-আতঙ্কের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে দুই কোটি ৩০ লাখ লোকের তাইওয়ান। আকস্মিকভাবে দ্বীপটির বিমান প্রতিরক্ষা শনাক্তকরণ অঞ্চল (এডিআইজেড) দিয়ে চীনা যুদ্ধবিমানের উড্ডয়ন বেড়ে গেছে। এতে অঞ্চলটি আন্তর্জাতিক উত্তেজনা কেন্দ্রভূমি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় চীনা আগ্রাসনের হিসাব রাখার পর থেকে সব তথ্যভাণ্ডার বিশ্লেষণ করেছে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি। এতে দেখা যায়, তাইওয়ানের আকাশসীমায় চীনা বিমানের অনুপ্রবেশের আকার ও সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে।
গেল বছর তাইওয়ান বলেছে, দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় বিমান প্রতিরক্ষা অঞ্চল দিয়ে ৩৮০টি চীনা বিমানের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এরপর চলতি বছরে তা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। গেল ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ৬৯২টি চীনা যুদ্ধবিমান তাইওয়ানের আকাশসীমায় ঢুকে পড়েছে।