ঢাকা, সোমবার ১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৭ | এখন সময়:

Advertise@01680 34 27 34

ডলারের বিপরীতে টাকার ২–৪ শতাংশ অবমূল্যায়ন ভালো ফল দেবে: ফরাসউদ্দিন


অনলাইন ডেস্কঃ

প্রকাশিত:   ০১:১২ পিএম, বুধবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট:   ০১:১২ পিএম, বুধবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২১  
ডলারের বিপরীতে টাকার ২–৪ শতাংশ অবমূল্যায়ন ভালো ফল দেবে: ফরাসউদ্দিন
ডলারের বিপরীতে টাকার ২–৪ শতাংশ অবমূল্যায়ন ভালো ফল দেবে: ফরাসউদ্দিন

মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার মান ২ থেকে ৪ শতাংশ অবমূল্যায়ন করা হলে ভালো ফল মিলবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।

সাবেক এই গভর্নর বলেন, ‘আমদানির জন্য ডলারের দাম কমানো এবং সাধারণ রপ্তানির ওপর শতকরা ১ ভাগ প্রণোদনা ও প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে শতকরা ২ ভাগ প্রণোদনা প্রদান—এগুলো অর্থনীতি শাস্ত্র সমর্থন করে না। কোনো দেশের অর্থনীতির অভিজ্ঞতাও এগুলোকে উৎসাহিত করে না। এসব না করে বরং যাঁরা জানেন-বোঝেন, তাঁদের দিয়ে এক–দুই মাসের মধ্যে সমীক্ষা করে প্রয়োজনে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ২-৪ শতাংশ অবমূল্যায়ন করলে বর্তমানের চেয়ে ভালো ফল পাওয়া যাবে। কারণ, আমদানি ভীষণভাবে বাড়ছে। অন্যদিকে প্রবাসী আয় গত ছয় মাসে ৪০০-৫০০ কোটি ডলার কমেছে। আমি চিত্রটা ভালো দেখছি না।’

আজ বুধবার দ্বিতীয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলনে এক ভিডিও বার্তায় সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন এসব কথা বলেন। সিটি ব্যাংকের সহযোগিতায় দৈনিক বণিক বার্তা পত্রিকা রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘পাঁচ দশকের উন্নয়ন অভিযাত্রায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক’ শীর্ষক এই সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে দুজন সাবেক গভর্নর ও বর্তমান গভর্নর সশরীর উপস্থিত ছিলেন। বণিক বার্তা পত্রিকার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসরুর আরেফিন।

অবশ্য মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের সঙ্গে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করেন আরেক সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান। তিনি বলেন, সাম্প্রতিককালে মুদ্রা বিনিময় হারের ওপর চাপ বেড়েছে। কারণ, গত পাঁচ মাসে হঠাৎ করে আমদানি ৫৪ শতাংশ বেড়েছে। আশার কথা, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি ৩০ শতাংশ এবং কাঁচামাল আমদানি প্রায় শতভাগ বেড়েছে। এগুলো বিনিয়োগবান্ধব লক্ষণ।

আতিউর রহমান আরও বলেন, মুদ্রা বিনিময় হারের ওপর যে চাপ রয়েছে, তা সাময়িক। এই চাপ থেকে উত্তরণে প্রবাসী আয়ের ওপর প্রণোদনা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব দেন তিনি। একই সঙ্গে প্রবাসীদের জন্য যেসব বন্ড রয়েছে, সেগুলোর সুদ কমিয়ে হলেও প্রত্যেক বিনিয়োগকারীকে ১ কোটি টাকার বেশি কেনার সুযোগ প্রদানের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এতে দেশে ডলারের সরবরাহ বাড়বে।

খেলাপি ঋণ বিষয়ে সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০৯ ও ২০১৪ সালে ইচ্ছাকৃত শীর্ষ দশ খেলাপি গ্রাহককে বিশেষ সুযোগ দেয়। এ জন্য রাষ্ট্রকে অনেক মূল্য দিতে হচ্ছে।

এদিকে ব্যাংকব্যবস্থায় বাস্তবিক অর্থে কোনো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নেই বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা অনেক সময় অসুবিধায় পড়েন। তাঁরা সমাধান চেয়ে যখন পান না, তখন রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাঁদের সাহায্য করার চেষ্টা করেন। এটিকে বাস্তবিক অর্থে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বলা যায় না।

প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘ব্যাংকব্যবস্থায় বড় সমস্যা হচ্ছে, খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। অনেকে বড় অঙ্কের ঋণ নিয়ে ফেরত দিচ্ছেন না। তাতে যেটি হয়, ব্যাংক নতুন করে অতিরিক্ত আমানত না পেলে গ্রাহকদের ঋণ দিতে পারে না। তাই খেলাপি ঋণ একটি সামাজিক অপরাধ। তবে ঋণ নিয়ে ফেরত দেব না, এমন মানসিকতা নিয়ে সবাই ব্যবসায়ে আসেন না। হাজারে কয়েকজন এমন থাকতে পারেন।’

আর্থিক খাতের দক্ষতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমরা স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি। সেটির সঙ্গে আর্থিক খাতকে দক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠতে হবে। শুধু জিডিপিতে জোর দিলে হবে না। আর্থিক খাত দক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য না হলে বৈশ্বিক অস্থিতিশীল আর্থিক ব্যবস্থার সঙ্গে তাল মেলানো যাবে না।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল কাজ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও আর্থিক খাতের তদারকি। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড এই কাজ করে না। কঠিন এই কাজটি ব্যালান্স করেই করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।’ নিজের মেয়াদকালে বেসরকারি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের চাপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা কৌশলে সেই চাপ এড়িয়েছি।’

সাবেক এই গভর্নর আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক অতিমাত্রায় তদারকি করবে না। আবার ছেড়েও দেবে না। এখানে সমন্বয়টা খুব কঠিন। আমানতকারী এবং শিল্প ও ব্যাংকের স্বার্থে, সর্বোপরি দেশের স্বার্থে কাজ করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে।

খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে দুটি পরামর্শ দেন হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ। তিনি বলেন, ‘হা-মীম গ্রুপ বছরে ৭৫ কোটি ডলারের পোশাক ও বস্ত্র রপ্তানি করে। ৬৪ হাজার কর্মীকে মাসে ১০০ কোটি টাকা বেতন দেয়। গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানির বিল দেয় ১০ কোটি টাকা। আমার প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকঋণের পরিমাণ ৩৫০ কোটি টাকা। একটি প্রতিষ্ঠানকে কত টাকা ঋণ দেওয়া যাবে, তার একটি সীমা নির্ধারণ করা আছে। তারপরও সীমার বেশি ঋণ নিতে ফাঁকফোকর দিয়ে অনেক আবেদন ব্যাংক অনুমোদন হয়। এই ফাঁকফোকর বন্ধ হলে খেলাপি ঋণ কমবে।’

এ কে আজাদ সরকারি ব্যাংকগুলোকে একটি ব্যাংকে পরিণত করার পরামর্শ দেন। বলেন, রাজনৈতিক কারণে সরকারি ব্যাংকগুলোকে অনেক ঋণ দিতে হয়। ব্যাংকের সংখ্যা কমানো গেলে খেলাপি ঋণও কমিয়ে আনা সম্ভব।

অনুষ্ঠানের শুরুতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর ফজলে কবির। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত পাঁচ দশকের সামগ্রিক কার্যক্রম ও অর্জনের কথা তুলে ধরেন। বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সব সময় সরকার, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মানবাধিকার ও অর্থের সমান বণ্টনের জন্য কাজ করবে।  

জ্যেষ্ঠ অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, করোনাকালে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী চারটি মূলনীতি ঘোষণা করেছেন—সরকারি ব্যয়, সামাজিক সুরক্ষার আওতা, স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণ ও বাজারে অর্থ সরবরাহ বৃদ্ধি করা। এর মধ্যে শেষের দুটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক খাতের ওপর তদারকির পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। তিনি গত এক দশকে ডিজিটালাইজেশনকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বড় অর্জন বলে উল্লেখ করেন। 

জাতীয় থেকে আরও পড়ুন

বাণিজ্য অর্থনীতি মুদ্রা বাণিজ্য সম্মেলন

আপনার মন্তব্য লিখুন...