Oops! It appears that you have disabled your Javascript. In order for you to see this page as it is meant to appear, we ask that you please re-enable your Javascript!
ঢাকা, বুধবার, ২২ মার্চ, ২০২৩  |  Wednesday, 22 March 2023  |  এখন সময়:

Advertise@01680 34 27 34

ইউক্রেন যুদ্ধের শরণার্থী বা দয়ার ক্ষেত্রে বিপরীত আচরণ


অনলাইন ডেস্কঃ

প্রকাশিত:   ০৩:০৪ এএম, রবিবার, ১০ এপ্রিল ২০২২   আপডেট:   ০৩:০৪ এএম, রবিবার, ১০ এপ্রিল ২০২২  
ইউক্রেন যুদ্ধের শরণার্থী বা দয়ার ক্ষেত্রে বিপরীত আচরণ
ইউক্রেন যুদ্ধের শরণার্থী বা দয়ার ক্ষেত্রে বিপরীত আচরণ

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর এ পর্যন্ত পোল্যান্ডে পালিয়ে এসেছে ২৫ লাখ ইউক্রেনীয় শরণার্থী এবং হাঙ্গেরিতে আশ্রয় নিয়েছে সাড়ে তিন লাখ। ২০১৫ সালে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেল যে ১১ লাখ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে আশ্রয় দিয়েছিলেন, তাদের ৪০ শতাংশই ছিল সিরীয়। গণহত্যা থেকে বাঁচতে মধ্যপ্রাচ্য থেকে পালিয়ে আসা সেসব শরণার্থীর জন্য সে সময় সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছিল হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ড।

এ ধরনের দ্বৈত নীতি কিছু মানুষকে, বিশেষ করে প্রগতিশীলদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। তাঁরা বলছেন, আরব অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঠেকাতে হাঙ্গেরি তাদের সীমান্তে টিয়ার গ্যাসের শেল ও জলকামান ব্যবহার করেছিল। অথচ ইউক্রেনীয়দের ক্ষেত্রে দুই বাহু বাড়িয়ে স্বাগত জানাচ্ছে। তাঁরা মনে করেন, এটা বর্ণবৈষম্য বা শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী আচরণ।

প্রত্যেক মানুষের জীবনই সমান মূল্যবান। নৈতিক বিচারে আলেপ্পোর ভয়তাড়িত তরুণ আর খারকিভের আশা হারানো মায়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। কিন্তু কিছু বাস্তব ও মনস্তাত্ত্বিক কারণে দেশভেদে শরণার্থীদের সঙ্গে ভিন্ন আচরণ করা হয়। সংস্কৃতি, ধর্ম, ভাষা ও রাজনীতি ভিন্নতার কারণেই সেটা ঘটে। বিশেষ করে, একই জনগোষ্ঠীর লোকের ক্ষেত্রে সমবেদনা প্রদর্শন করা হয়। যেমনটা এখন পোল্যান্ডে ঘটছে।

দৃষ্টান্ত হিসেবে থাইল্যান্ডের প্রসঙ্গ এখানে উল্লেখ করা যায়। অতীতে দেশটি কম্বোডিয়া, লাওস ও মিয়ানমার থেকে আসা লাখ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিল। কিন্তু ইউক্রেনের শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে হবে এমনটা চিন্তা করা থাইল্যান্ডের নাগরিকদের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু একই জনগোষ্ঠীর পার্শ্ববর্তী দেশের নাগরিকদের ক্ষেত্রে উপেক্ষা করা তাদের জন্য কঠিন। থাই হোক আর পোলিশ হোক, অধিকাংশ দেশের মানুষের পক্ষে তাদের সঙ্গে মিল আছে এমন জনগোষ্ঠীর সঙ্গে নিজেদের ভাগ্যকে জুড়ে দেওয়া সহজ। এটা শুধু চেহারায় মিলের জন্য নয়, একই সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা থেকে উঠে আসার কারণেও ঘটে। আবার অন্য জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে ভিন্ন আচরণ করা হয়। এটা মোটেই ঠিক নয়। প্রকৃত বিশ্বজনীনতা সত্যিই বিরল।

প্রকৃতপক্ষে তৃতীয় বিশ্বের প্রতি দরদ দেখানোর নামে যারা খুব দ্রুত কোনো ঘটনাকে বর্ণবাদী আচরণ বলে নিন্দা জানায়, তারাও একই ধরনের কুসংস্কারের দোষে দুষ্ট। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের হাতে ফিলিস্তিনি নিপীড়নের প্রতিটি ঘটনায় যে লোকগুলো ক্ষোভে ফেটে পড়েন; ইরিত্রিয়া, সুদান কিংবা মিয়ানমারে এর চেয়েও বেশি নৃশংসতার ক্ষেত্রে তারাই আবার চুপ করে থাকেন।

বিষয়টা আরও বেশি করে সামনে আনা প্রয়োজন। ইসরায়েলের অনেকের শিকড় ইউরোপে। গাজা কিংবা পশ্চিম তীরে সহিংসতার ঘটনায় পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মানুষের কাছে মনে হওয়াটা স্বাভাবিক যে এর সঙ্গে ইউরোপের ঔপনিবেশিক ইতিহাসের সম্পৃক্ততা আছে। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রেও একই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি তাঁরা পোষণ করেন। বর্ণবাদ একটি অত্যন্ত খারাপ ব্যবস্থা। কিন্তু গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রী কঙ্গোর খুনে শাসক মবুতু সেসে সেকো কিংবা উগান্ডার ইদি আমিনের শাসনামলে যে নৃশংসতা ঘটেছে, সেটা তো শ্বেতাঙ্গদের উদ্ভাবিত বর্ণবাদী ব্যবস্থাটির চেয়েও ভয়ানক।

এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি একধরনের বিশ্বাসঘাতকতা। এটা দ্বিমুখিতার চর্চা। মানবাধিকার বিষয়ে কঙ্গো কিংবা উগান্ডার মানুষের বোঝাপড়া শ্বেতাঙ্গদের মতো হবে—এমনটা কেউই আশা করে না। কিন্তু ইসরায়েলিরা অনেক বেশি ইউরোপের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় এ বিষয়টা তাদের ভালো করে জানা উচিত ছিল। একই ভূখণ্ডের বাসিন্দা হলেই শালীন আচরণের নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে, এমনটা নয়। বিরোধী পক্ষে কারা আছে, সেটা অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটা রাষ্ট্রের সঙ্গে অন্য রাষ্ট্রের যুদ্ধের চেয়ে গৃহযুদ্ধের বর্বরতা বেশি ভয়াবহ হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তানের রক্তক্ষয়ী দেশভাগ কিংবা রুয়ান্ডার গণহত্যা এবং ১৯৯০-এর দশকে বলকান গণহত্যার কথা স্মরণ করুন। ভাষা, ধর্ম কিংবা গোত্রীয় পার্থক্যের কারণে এসব সংঘাতে মানুষ হত্যার ঘটনা অনেক বেশি।

অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের নির্দয়তায় সামাজিক সম্পর্কও জবাবদিহির মুখে পড়ে। যে প্রতিবেশীর সন্তান তোমার বাড়িতে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে, তাকে খুন করা মোটেই সহজ নয়। এ ক্ষেত্রে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়। যখন তুমি এমন কাউকে হত্যা করছ যে তোমার খুবই পরিচিতজন, তাকে হত্যার আগে তোমার ভেতরের সমস্ত মানবীয় বৈশিষ্ট্যকে জলাঞ্জলি দিতে হয়। রুয়ান্ডায় হুতুরা তুতসিদের ‘তেলাপোকা’র সঙ্গে তুলনা করে তাদের হত্যা করেছিল। হুতু উগ্র স্বদেশবাদীদের কাছে তুতসিরা ছিল বিধাতার এমন এক সৃষ্টি, যাদের নির্মূল করা যায়।

রাশিয়া ইউক্রেন আগ্রাসন শুরুর আগে থেকেই ( ২০১৪ সাল থেকে) পুবের রুশভাষী ও পশ্চিমের ইউক্রেনীয়ভাষীদের মধ্যে একটি গৃহযুদ্ধ চলমান ছিল। প্রকৃতপক্ষে ইউক্রেনের পরিস্থিতি এখন আরও জটিল। রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানো ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রুশভাষী। খিরকিভ, মারিউপোল, ওদেসার রুশভাষী জনগোষ্ঠী আবার ইউক্রেনীয় বলে পরিচিত। রাশিয়া ও ইউক্রেনের সংস্কৃতি, ধর্ম ও ভাষাগত পরিচয় অনেক ক্ষেত্রেই একটা আরেকটার সঙ্গে মিলেমিশে যায়। কিন্তু যুদ্ধ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির মুখ থেকে এই মিথ্যা বলিয়ে নিয়েছে যে ইউক্রেন সত্যিকারের দেশ নয়, ইউক্রেনের মানুষেরা সত্যিকারের মানুষ নন। অনেক রুশ সৈন্য জানেন না কী কারণে তাঁরা যুদ্ধ করছেন। আবার ইউক্রেনীয়রাও সেটা জানেন না।

ট্র্যাজিক বিষয় হচ্ছে, সামান্য ব্যবধানও মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ববোধ তৈরি করে, তাতেও বড় ধরনের ঘৃণার জন্ম হয়। শিকলে বাঁধা একদল রাশিয়ান যুদ্ধবন্দীকে মেশিনগান থেকে গুলি করা হচ্ছে—এ ধরনের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও এটাকে প্রাথমিকভাবে রাশিয়ার প্রোপাগান্ডা বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে এ রকমটা ঘটলেও আমরা কেউ বিস্মিত হব না। ইউক্রেনের সাধারণ নাগরিকের ওপর রাশিয়ার সৈন্যরা যেসব নৃশংসতা (নিপীড়ন, হত্যা, যৌন নিপীড়ন) চালিয়েছে, তারও প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে।

রাশিয়া আক্রমণ শুরুর পর ইউক্রেন থেকে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। এই শরণার্থীর ঢলে এবার কেবলই নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা। সুতরাং পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরির মানুষেরা ইউক্রেনের শরণার্থীদের দিকে সহায়তার যে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, তার প্রশংসা আমাদের সবার করা উচিত। সিরিয়া, আফগানিস্তান কিংবা ইউরোপের বাইরের অন্য কোনো মহাদেশের যুদ্ধের শিকার মানুষের জন্য ইউরোপীয়রা যদি সমান সহানুভূতি দেখাতে পারত, তাহলে সেটা চমৎকার একটা বিষয় হতে পারত। কিন্তু পূর্ব ইউরোপের শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী অনেকের মনে দাগ কাটার মতো সেটা যথেষ্ট নয়। প্রকৃতপক্ষে দয়া হচ্ছে সেই বিরল মানবীয় সম্পদ প্রয়োজনের সময় যেটার প্রদর্শন জরুরি।

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, ইংরেজি থেকে অনুবাদ মনোজ দে
ইয়ান বুরুমা দ্য চার্চিল কমপ্লেক্স: দ্য কার্স অব বিয়িং স্পেশাল, ফ্রম উইনস্টন অ্যান্ড এফডিআর টু ট্রাম্প অ্যান্ড ব্রেক্সিট বইয়ের লেখক

মতামত থেকে আরও পড়ুন

রাশিয়া রাশিয়া ইউক্রেন সংঘাত শরণার্থী সংকট ইউক্রেন

আপনার মন্তব্য লিখুন...