আগের বছরগুলোর নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা চেয়ে অনেক বেড়েছে
অনলাইন ডেস্কঃ
প্রকাশিত: ০৩:০১ পিএম, সোমবার, ৩ জানুয়ারী ২০২২ আপডেট: ০৩:০১ পিএম, সোমবার, ৩ জানুয়ারী ২০২২
সদ্য বিদায় নেওয়া বছর ২০২১ সালে ১ হাজার ২৫৩ নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে শিশু ৭৩৮ জন অর্থাৎ মোট ঘটনার প্রায় ৫৯ শতাংশ। এসব নারী ও শিশুর মধ্যে ৪৬ জনকে হত্যা করা হয়। একই বছর নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনাও বেড়েছে। আর তা আগের বছরগুলোর চেয়ে অনেক বেশি।
আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি (বিএনডব্লিউএলএ)। ‘নারীর প্রতি সহিসংতায় বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি’ শিরোনামে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত বছর দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলার সংখ্যা ছিল আনুমানিক ১৯ হাজার। এর মধ্যে শুধু ১০ জেলা—যশোর, খুলনা, নরসিংদী, রাজশাহী, ফরিদপুর, সিলেট, নড়াইল, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর ও কুমিল্লায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা ছিল ১১ হাজার ৭৭১টি।
গত বছর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরগুলোর সংকলনের ভিত্তিতে তৈরি করা পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে বিএনডব্লিউএলএ জানায়, গত বছর ৬০২টি পারিবারিক সহিংসতার ঘটনার কথা জানা গেছে। এর মধ্যে ২৮৫ জন নারীকে স্বামী ও স্বামীর পরিবারের সদস্যরা হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পরিবার ও সমাজে অসহিষ্ণুতা বেড়ে যাওয়ায় করোনা মহামারির সময় নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা অর্থাৎ ধর্ষণ, তালাক, পারিবারিক সহিংসতা, যৌন নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, পাচার, অপহরণ ও যৌতুকের জন্য নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনডব্লিউএলএর সভাপতি সালমা আলী বলেন, ‘আগের বছরগুলোর তুলনায় গত বছর নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা অনেক বেড়েছে। দেশে অনেক ভালো ভালো আইন থাকলেও যথাযথভাবে এগুলোর প্রয়োগ না হওয়ায় নির্যাতনের ঘটনা কমছে না। একজন ভুক্তভোগীকে বিচার পাইয়ে দিতে হলে তাঁর জন্য কিছু সুরক্ষামূলক ব্যবস্থাও নিতে হয়। সরকার সে ক্ষেত্রে কতটুকু ব্যবস্থা নিতে পারছে, সে প্রশ্নও আসে।’
যথাযথ তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে যেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল দ্রুত বিচার করতে পারেন, সে জন্য জনবল বাড়াতে হবে উল্লেখ করে সালমা আলী বলেন, ‘আইন প্রয়োগে শক্ত নজরদারি রাখতে হবে। পারিবারিক সহিংসতা বন্ধে যে আইনটি রয়েছে, তা মূলত প্রতিরোধমূলক। সেটিও ঠিকঠাক প্রয়োগ করা হচ্ছে না।’
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনডব্লিউএলএর সাধারণ সম্পাদক জোবায়দা পারভিন। সংস্থার পক্ষে তিনি মোট ১৪টি সুপারিশ তুলে ধরেন।
সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে ২০০৯ সালে হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন, বাল্যবিবাহ, পারিবারিক নির্যাতনসহ নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে একসঙ্গে কাজ করা, মামলাগুলোর দ্রুত বিচার করা, মামলার তদন্ত রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপমুক্ত রাখা, প্রান্তিক গোষ্ঠীর (প্রতিবন্ধী, হিজড়া) জন্য বৈষম্যহীন আইন পরিষেবা নিশ্চিত করা, সব ধরনের ধর্ষণ আইনের আওতাভুক্ত করার জন্য ধর্ষণের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা, নির্যাতনের ঘটনা ঘটার পর সাংবাদিকদের তা প্রকাশ ও নিয়মিত ফলোআপ করা ইত্যাদি।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনডব্লিউএলএর সহসভাপতি সীমা জহুর।