Oops! It appears that you have disabled your Javascript. In order for you to see this page as it is meant to appear, we ask that you please re-enable your Javascript!
ঢাকা, শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০২৩  |  Friday, 31 March 2023  |  এখন সময়:

Advertise@01680 34 27 34

হাওরে ফসলডুবি ডুবিয়ে গেছে জামাল ব্যাপারীকেও


অনলাইন ডেস্কঃ

প্রকাশিত:   ০৩:০৪ এএম, রবিবার, ১০ এপ্রিল ২০২২   আপডেট:   ০৩:০৪ এএম, রবিবার, ১০ এপ্রিল ২০২২  
হাওরে ফসলডুবি ডুবিয়ে গেছে জামাল ব্যাপারীকেও
হাওরে ফসলডুবি ডুবিয়ে গেছে জামাল ব্যাপারীকেও

হাওরপাড়ে টিনের বেড়া ও চালার একটি লম্বালম্বি ঘর। স্থাপনাটি অস্থায়ী। চার দিন আগে এই ঘরে সঙ্গীদের নিয়ে উঠেছেন জামাল উদ্দিন ব্যাপারী (৫৯)। যে হাওরপাড়ে জামাল ব্যাপারী ৫০ জনের দল নিয়ে অস্থায়ী আবাস গেড়েছেন, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমির সেই চাপতির হাওরের বাঁধ ভেঙে গত বৃহস্পতিবার সব ফসল তলিয়ে গেছে। চোখের সামনে ফসলডুবির ঘটনা অস্থির করে তুলেছে জামাল ব্যাপারীকে। কথা বলতে গিয়ে বারবার চোখ মুছছিলেন তিনি।

হাওরপাড়ের কচুয়া গ্রামে বৃহস্পতিবার বিকেলে কথা হয় জামাল ব্যাপারী ও তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে। জামাল ব্যাপারী একপর্যায়ে তাঁর এই কান্নার পেছনের গল্প বলেন। তিনি জানান, তাঁর বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার রসুলপুর গ্রামে। বোরো মৌসুমে দলবল নিয়ে ধান কাটতে আসেন সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায়। এই চাপতির হাওরে তিনি ২০ বছর ধরে ধান কাটছেন। এবার ধান তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তিনি। এখন কী করবেন, সেই চিন্তায় দিশেহারা।

জামাল ব্যাপারী আরও বলেন, তাঁকে দেখতে সচ্ছল মনে হলেও তিনি আসলে ‘গরিব’ মানুষ। বোরো মৌসুমে হাওরে দল নিয়ে ধান কেটে যে আয় হয়, সেটি দিয়ে তাঁর সংসার চলে। তিনি প্রতিবছর বোরো মৌসুমে তাঁর গ্রামের একদল মানুষকে নিয়ে আসেন সুনামগঞ্জে। সবার প্রধান তিনি। এবার তাঁর দলে আছেন ৫০ জন। একেকজনকে আনতে ওই ব্যক্তিদের পরিবারের এক মাসের খরচ হিসেবে ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকা অগ্রিম দিতে হয়েছে। এতে তাঁর প্রায় ছয় লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। ধান তোলার পর এই টাকা তিনি ফেরত পাবেন। এ ছাড়া সবার যাতায়াত, এই কয়দিনেও তাঁর বেশ টাকা খরচ হয়েছে। হাওরে এক মাস এই দলের সবার থাকা-খাওয়ার সব খরচ তিনিই বহন করবেন। এ জন্য প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার টাকা ব্যয় আছে বলে জানান তিনি।

জামাল ব্যাপারী বলেন, তাঁরা চাপতির হাওরের কয়েকজন বড় গৃহস্থের ধান কাটার জন্য চুক্তি করে এসেছেন। তাঁদের সঙ্গে তাঁর বেশ পুরোনো সম্পর্ক। এ জন্য তাঁদের কাছ থেকে অগ্রিম কিছু টাকাও নিয়েছেন। প্রতি বিঘা জমির ধান কাটার জন্য তাঁরা দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা পাবেন। তাঁদের দলটি প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ বিঘা জমির ধান কাটতে পারবে। আয় থেকে দলের সদস্যরা নির্ধারিত একটা অংশ পাবেন। বাকিটা তাঁর। কিন্তু এবার ধানে কাঁচি লাগানোর আগেই সব শেষ হয়ে গেছে। এখন যে তিনি দলবল নিয়ে বাড়ি ফিরবেন, সেই টাকাও নেই।

জামাল ব্যাপারীর দলে থাকা একই গ্রামের মোহাম্মদ হারুন (৪০) বলেন, তিনি এই দলের সঙ্গে চার বছর ধরে বোরো মৌসুমে সুনামগঞ্জের হাওরে আসেন। তাঁদের এলাকায় তেমন কোনো কাজ নেই। এক মাসে ধান কেটে ভালোই আয় হয়। হারুন আরও বলেন, ব্যাপারী অগ্রিম ১২ হাজার টাকা দিছে। পরিবারে ছয়জন মানুষ। ছোট এক ছেলে, এক মেয়ে স্কুলে যায়। এখন তো খালি হাতে ফিরতে হবে। ব্যাপারীর টাকা দেওয়ার তো কোনো উপায় নেই।

শুধু জামাল ব্যাপারীর দল নয়, হাওরে ফসলডুবিতে বিপাকে পড়েছেন ভোলার একই এলাকা থেকে ধান কাটা শ্রমিকের দল নিয়ে আসা খলিল ব্যাপারী ও কামাল ব্যাপারী। এই দুই দলে আছেন আরও ৬২ জন।

জামাল ব্যাপারী জানালেন, এই এলাকার সবাই তাঁকে চেনেন। করোনার কারণে যখন শ্রমিক–সংকট ছিল, যাতায়াতে বিধিনিষেধ ছিল; তখন দিরাইয়ের ইউএনও তাঁকে ফোন করে নিয়ে আসেন। তিনিই দলের আসার খরচ দিয়েছিলেন। জামাল আরও বলেন, ‘এ রকম পরিস্থিতিতে আগে কখনো পড়িনি। ২০১৭ সালে আসিনি, তখন আসার আগেই ফসল তলিয়ে যায়। বিশ্বাস করবেন না, দলের লোকদের অগ্রিম যে টাকা দিছি, সেটা আমি সুদে আনছি। হাওরে পানি ঢোকার পর থেকে শরীর কাঁপছে। দাঁড়াতে পারছি না।’

ব্যাপারীর সঙ্গে কথা বলার সময় পাশে ছিলেন কচুয়া গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি কানাই লাল দাস (৯৯)। তিনি জানান, একসময় সুনামগঞ্জের হাওরে বোরো মৌসুমে ধান কাটতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শ্রমিকেরা দলে দলে আসতেন। তাঁরা সুনামগঞ্জে ‘ব্যাপারী’ বা ‘ভাগালু’ হিসেবে পরিচিত। ভাগে ধান কাটা থেকে এসেছে ‘ভাগালু’।

ধান কাটা শেষে বিদায়ের সময় তাঁদের জন্য একদিন বিশেষভাবে খাবারদাবারের আয়োজন করা হয়। সে দিন অনেক গৃহস্থের বাড়িতে গানবাজনাও হয়। গৃহস্থরা নতুন লুঙ্গি, গেঞ্জি, গামছা উপহার দিতেন তাঁদের। এখন অবশ্য অন্য জেলা থেকে আসা ধান কাটা শ্রমিকের সংখ্যা কমে গেছে। তবুও বড় বড় গৃহস্থ বোরো মৌসুম এলে তাঁদের পুরোনো ব্যাপারী ও ভাগালুদের খোঁজ করেন।

বাংলাদেশ থেকে আরও পড়ুন

সিলেট বিভাগ হাওর দিরাই সুনামগঞ্জ ফসলডুবি

আপনার মন্তব্য লিখুন...