Oops! It appears that you have disabled your Javascript. In order for you to see this page as it is meant to appear, we ask that you please re-enable your Javascript!
ঢাকা, শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০২৩  |  Friday, 31 March 2023  |  এখন সময়:

Advertise@01680 34 27 34

সুরমা নদীর পানি আবার বাড়ছে, হাওরে চলছে ধান কাটা


অনলাইন ডেস্কঃ

প্রকাশিত:   ০২:০৪ এএম, শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২২   আপডেট:   ০৩:০৪ এএম, শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২২  
সুরমা নদীর পানি আবার বাড়ছে, হাওরে চলছে ধান কাটা
সুরমা নদীর পানি আবার বাড়ছে, হাওরে চলছে ধান কাটা

সুনামগঞ্জে আবারও উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামছে। ২৪ ঘণ্টায় জেলার সুরমা নদীর পানি বেড়েছে ৬২ সেন্টিমিটার। এ ছাড়া জেলার সীমান্তবর্তী যাদুকাটা নদী ও পাটলাই নদেও পানি বেড়েছে। তাই দ্বিতীয় দফা হাওরের ফসল ঝুঁকিতে পড়েছে।

তবে সুনামগঞ্জে বৃহস্পতি ও শুক্রবার ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকেরা কিছুটা স্বস্তিতে আছেন। এ অবস্থায় যেসব হাওরে ধান পেকেছে, সেখানে ধান কাটছেন তাঁরা। কোনো কোনো হাওরে আতঙ্কে আধা পাকা ধানই কেটে ঘরে তুলছেন কৃষকেরা। একই সঙ্গে বৃষ্টি না হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ ফসল রক্ষা বাঁধগুলোর সংস্কারকাজ করা যাচ্ছে অনেকটা নির্বিঘ্নে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে বৃহস্পতিবার থেকে আবার ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। একই সময়ে সুনামগঞ্জের ভারী বৃষ্টি হওয়ার কথা। উজানে বৃষ্টি হওয়ার কারণে সুনামগঞ্জে নদ-নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুরমা নদীর পানি বৃহস্পতিবার বেলা দুইটায় ছিল ৪ দশমিক ৬৭ মিটার। শুক্রবার বেলা দুইটায় সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ২৯ মিটারে। জেলার সীমান্ত নদী যাদুকাটায় গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে ২০ সেন্টিমিটার, পাটলই নদে বেড়েছে ২১ সেন্টিমিটার। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।

পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে প্রথম আঘাত হানে জেলার তাহিরপুর উপজেলায়। মূলত এই উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরে পানি নামে প্রথম। টাঙ্গুয়া ও আশপাশের হাওরগুলোতে পানির চাপ রয়েছে সবচেয়ে বেশি। এ কারণে সেখানে থাকা বাঁধগুলো রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। যদিও টাঙ্গুয়ার হাওরে বোরো ফসল হয় কম, এই হাওর উজানের ঢলের পানি ধরে রাখা ‘ট্যাংক’ হিসেবে পরিচিতি। এখানে পানি থাকলে অন্য হাওরে চাপ কমে। টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের গোলাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা খসরুল আলম জানান, বৃহস্পতিবার রাত থেকে হাওরে আবার পানি বাড়তে শুরু করে। বাঁধে লোকজন কাজ করছেন। রাতে পাহারা দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের লোকজনও সেখানে ছিলেন। তবে বৃষ্টি হলে বাঁধে সমস্যা হতে পারে বলে জানান এই কৃষক।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রায়হান করিব শুক্রবার দুপুরে উপজেলার বর্ধিত গুরমার হাওরের একটি বাঁধ থেকে জানান, বাঁধে পানির চাপ বেড়েছে। সমস্যা হচ্ছে টাঙ্গুয়ার হাওরের বাঁধগুলোকে নিয়েই। এখানে দিনরাত কাজ করতে হচ্ছে। দেখা গেছে, একদিকে কাজ করলে অন্যদিকে ফাটল দেখা দেয়। আবার ধসে যাচ্ছে। তখন সেখানেও কাজ করতে হয়। উপজেলার অন্য হাওরগুলোর বাঁধ ভালো আছে বলে জানান তিনি।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের কৃষক আবদুল গণি আনসারী (৬০) বলেন, এলাকার রক্তি নদের পানি বাড়ছে। মানুষ আতঙ্ক নিয়েই ধান কাটছে। তিনি চার একর জমির মধ্যে দুই একর কেটেছেন। সবাই এখন ধান কাটার চেষ্টা করছেন। আবদুল গণি বলেন, এবার সুনামগঞ্জে কম বৃষ্টি হওয়াতেই ফসল এখন পর্যন্ত ঠিকে আছে। মানুষ বাঁধে যেমন কাজ করতে পারছে, তেমনি ধানও কাটতে সুবিধা হচ্ছে। না হলে উজান ও ভাটির বৃষ্টিতে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে হাওরের সব ধান তলিয়ে যেত। যেভাবে ২০১৭ সালে হয়েছিল।

জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ বলেন, ‘আমরা একদিকে কৃষকদের বলছি ধান কাটতে, অন্যদিকে হাওরের বাঁধ রক্ষায় কাজ করছি। সুনামগঞ্জে শুক্রবার দুপুরের রোদ দেখলে তো বোঝা যাবে না, হাওরে কী হচ্ছে। পানি কিন্তু বাড়ছে। দেখা যাবে ঝড়-বৃষ্টি নেই, কিন্তু ঢলে ফসলের সর্বনাশ করে দিয়ে গেছে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে জানান, বৃষ্টি উজানে হচ্ছে বেশি। সেটা আরও দু-এক দিন হবে। একই সময়ে সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হওয়ার কথা, তবে কম হচ্ছে। কোনো জমির ধান ৮০ শতাংশ পাকলেই সেটা কেটে ফেলতে বলা হচ্ছে। জমির পাকা ধান দ্রুত কাটতে হবে। সেটা রাখা মানেই ঝুঁকি।

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আমরা যা করছি, সেটা আশঙ্কা ধরেই। বাঁধ রক্ষা তো আছেই, এখন জোর দেওয়া হচ্ছে ধান কাটায়। ১৫ দিন ধরে মাটির বাঁধগুলো ঢলের পানির ব্যাপক চাপ সামলাচ্ছে। মাটি নরম হয়ে গেছে। অনেক বাঁধে ফাটল, ধস আছে। সেগুলোতে দিনরাত কাজ হচ্ছে। এখন প্রকৃতি সদয় হলেই রক্ষা।’

সুনামগঞ্জে এবার ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১৪ লাখ মেট্রিক টন। এ পর্যন্ত ১৪ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। ধান কাটায় কৃষকের পাশাপাশি হাওরে কম্বাইন্ড হারভেস্টর ও রিপার রয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে আরও পড়ুন

সিলেট বিভাগ হাওর সুনামগঞ্জ বৃষ্টিপাত ধান চাষ কৃষি

আপনার মন্তব্য লিখুন...