শেষ দুই দিনের রোমাঞ্চের অপেক্ষা
ক্রীড়া ডেস্কঃ
প্রকাশিত: ০৩:০৪ পিএম, শনিবার, ২ এপ্রিল ২০২২ আপডেট: ০৩:০৪ পিএম, শনিবার, ২ এপ্রিল ২০২২
দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংসের মাত্র শুরু। তিন বল হতেই আম্পায়ারের পকেট থেকে লাইটমিটার বেরিয়ে এল। কাগজে-কলমে তখনো দিনের ২০ ওভারের মতো খেলা বাকি। এমন সময়ে আলো নিয়ে আম্পায়ারদের মনে সন্দেহ দিনের বাকি খেলা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেয়। খালেদ আহমেদের ওভারটি অবশ্য ভালোয় ভালোয় শেষ হয়েছে। এরপরই স্পিন আক্রমণ নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। আলোকস্বল্পতা যেন বাধা হয়ে উঠতে না পারে।
কিন্তু সে পরিকল্পনা কাজে আসেনি। দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের ৪ ওভার শেষ হতে না হতেই সবাইকে নিয়ে মাঠ ছাড়লেন দুই আম্পায়ার। এরপরও যদি দিনের খেলা আর হবে কি না, এ নিয়ে সন্দেহ থাকে, সেটা দূর করে দিয়েছে একপশলা বৃষ্টি। দ্বিতীয় ইনিংসে বিনা উইকেটে ছয় রান তুলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তাতে ৭৫ রানে এগিয়ে আছে স্বাগতিক দল। ডারবান টেস্টের শেষ দুই দিন তাই রোমাঞ্চ নিয়েই অপেক্ষা করছে সবাই।
রোমাঞ্চের হিসাব না হয় কাল আর পরশু হবে। আজ অন্তত দিনের খেলা আগে শেষ হওয়ায় মন খারাপ হবে বাংলাদেশের। মাত্র একজন স্পিনার নিয়ে নামার সিদ্ধান্তটাও পোড়াবে দলকে। গতকাল দিনের শেষ সেশনে পেসারদের হাতে বল দেয়নি দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ বিকেলে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। আজও শেষ সেশনে স্পিনারদের জন্য অনেক সুবিধা নিয়ে দেখা দিয়েছিল ডারবানের উইকেট। মিরাজের দুই ওভার এবং স্পিনার–স্বল্পতা ঢাকতে এসে নাজমুল হোসেনও সেটা বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন।
নাজমুলের প্রথম বল তো এতটাই বাঁক নিয়েছে যে বাংলাদেশ দল ধরেই নিয়েছিল ডিন এলগারের ব্যাটের স্পর্শ পেয়েছে সে বল। সে সঙ্গে একটু শব্দও শোনা গেছে। তাই তৃতীয় ওভারেই রিভিউ নিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু দেখা গেছে ব্যাট মাটিতে লাগার শব্দ ছিল সেটা।
রিভিউ নষ্ট হলেও নাজমুলের বলেই দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনারের অমন অস্বস্তি বাংলাদেশের আশা বাড়াচ্ছিল। ডারবানে প্রথম দুই সেশনের চেয়ে তৃতীয় সেশনেই রান তোলা কঠিন। আজ দ্রুত কিছু উইকেট তুলে নিলে, কাল অন্তত দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে সমানে-সমান থেকে লড়াইয়ে নামতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু বৃষ্টি একপর্যায়ে থেমে গেলেও অন্ধকার আকাশ নিশ্চিত করেছে আজ আর নামা হচ্ছে না দুই দলের।
এর আগে তৃতীয় দিনের গল্পটা মাহমুদুল হাসানের। ৪৪ রান নিয়ে ব্যাট করতে নেমেছিলেন আজ। অন্য প্রান্তে সঙ্গী ছিলেন তাসকিন। দিনের খেলা যত গড়িয়েছে, সঙ্গীর নামটা পাল্টেছে। কখনো সেটা লিটন দাস, কখনো ইয়াসির আলী, কখনোবা মেহেদী হাসান মিরাজ। লিটনের সঙ্গে ৮২ রানের জুটি গড়েছেন, মিরাজের সঙ্গে ৫১।
এমনকি খালেদ আহমেদকে সঙ্গী করেই ২৭ রান এনে দিয়েছেন এই ওপেনার। একপর্যায়ে সঙ্গীর অভাবে ভুগতে ভুগতে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন ফিরেছেন মাহমুদুল, নামের পাশে ১৩৭ রান। বাংলাদেশের স্কোর তখন ২৯৮।
‘ক্যারিং দ্য ব্যাট থ্রু আউট দ্য ইনিংসে’র সর্বশেষ সংযোজন হতে না পারার আক্ষেপটা বেশ কিছু রেকর্ডে ভুলতে পারছেন মাহমুদুল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে কখনো শতক না পাওয়ার আক্ষেপ ঘুচিয়েছেন মাহমুদুল। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের সর্বোচ্চ ইনিংসটা দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে—এটা বলার সুযোগও পাচ্ছেন। এবার দায়িত্ব বোলারদের। আগামীকাল সকালে দ্রুত কিছু উইকেট তুলে নিতে পারলে শুধু মাহমুদুলের একক অর্জন নিয়েই তৃপ্ত থাকতে হবে না বাংলাদেশকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৩৬৭ ও ৪ ওভারে ৬/০ (এরউয়ি ৩*, এলগার ৩*; খালেদ ১-০-১-০, মিরাজ ২-১-২-০, নাজমুল ১-০-৩-০)।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১১৫.৫ ওভারে ২৯৮ (মাহমুদুল ১৩৭, লিটন ৪১, ইয়াসির ২২, মিরাজ ২৯, খালেদ ০, ইবাদত ০*; অলিভিয়ের ১/৩৬, উইলিয়ামস ৩/৫৪, হারমার ৪/১০৩, মহারাজ ০/৬৫, এলগার ০/৮, মুল্ডার ১/২৩।