ঢাকা, রবিবার, ২৮ মে, ২০২৩  |  Sunday, 28 May 2023  |  এখন সময়:

Advertise@01680 34 27 34

তাবাচ্ছুমের লাশ পেয়েছে পরিবার, জানাজা শেষে হলো দাফন


অনলাইন ডেস্কঃ

প্রকাশিত:   ০২:১২ এএম, শনিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট:   ০২:১২ এএম, শনিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২১  
তাবাচ্ছুমের লাশ পেয়েছে পরিবার, জানাজা শেষে হলো দাফন
তাবাচ্ছুমের লাশ পেয়েছে পরিবার, জানাজা শেষে হলো দাফন

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিখোঁজ আড়াই বছরের শিশু তাবাচ্ছুমের লাশ পেয়েছে পরিবার। আজ শনিবার বেলা পৌনে একটার দিকে পরিবার ও স্বজনদের কাছে তাবাচ্ছুমের লাশ হস্তান্তর করেছে বরগুনা জেলা প্রশাসন। এ সময় লাশ দাফন ও আনুষঙ্গিক খরচের জন্য পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

তবে এর আগে বেওয়ারিশ হিসেবে তাবাচ্ছুমের লাশ দাফনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। বরগুনা-২ (বামনা, পাথরঘাটা ও বেতাগী) আসনের সাংসদ শওকত হাচানুর রহমান গতকাল শুক্রবার ঝালকাঠি জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে বরগুনার ৩৬ জনের লাশ নিয়ে আসেন। তাদের মধ্যেই তাবাচ্ছুমের লাশও ছিল। তবে তখন কেউ নিশ্চিত হতে পারেননি তাদের মধ্যে তার লাশ আছে। শনিবার দুপুরের দিকে পাথরঘাটার নিখোঁজ তাবাচ্ছুমের পরিবারের স্বজন শিশুটির লাশ শনাক্ত করেন।

দুপুরে তাবাচ্ছুমের লাশ বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের ঘুটাবাছা গ্রামের বাড়িতে আনা হলে বাবা মোহাম্মদ নাছরুল্লাহ তুহিন, মা সনিয়া আক্তারসহ স্বজনদের আর্তনাদে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে কালমেঘার ঘুটাবাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তাবাচ্ছুমের জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

মেয়ের জানাজায় ইমামতি করেন তাবাচ্ছুমের বাবা মোহাম্মদ নাছরুল্লাহ তুহিন। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বরগুনা-২ আসনের সাংসদ শওকত হাচানুর রহমান, কালমেঘা ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম নাসির, ওই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আকন মোহাম্মদ সহিদ প্রমুখ।

জানাজার আগে উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশে সাংসদ শওকত হাচানুর রহমান আবেগতাড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘লঞ্চ দুর্ঘটনার খবরের পরপরই আমি বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে গিয়েছি। সেখানে ওই লঞ্চের আগুনে পোড়া মানুষের আর্তনাদ চোখে না দেখলে তাদের কষ্ট বোঝা সম্ভব নয়। এভাবে একে একে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল ও অভিযান-১০ লঞ্চ ঘুরে ঘুরে দেখেছি। সে এক বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা। শুক্রবার ঝালকাঠি প্রশাসনের কাছ থেকে বরগুনার ৩৬ জনের লাশ বুঝে পেয়েছি। তাদের মধ্যেই তাবাচ্ছুমের লাশও ছিল। স্বজনেরা ওই আড়াই বছরের শিশুটির লাশ শনাক্ত করেন।’

জানাজার আগে মুসল্লিদের উদ্দেশে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ছোট পাথরঘাটা বায়তুলমামুর জামে মসজিদের ইমাম ও তাবাচ্ছুমের বাবা মোহাম্মদ নাছরুল্লাহ তুহিন বলেন, লঞ্চের দ্বিতীয় তলার ডেকে স্ত্রী সোনিয়া আক্তার ও সন্তান তাবাচ্ছুমকে নিয়ে শুয়ে ছিলেন। মধ্যরাতে লঞ্চে আগুনের খবর পেয়ে তাঁরা সিঁড়ি বেয়ে লঞ্চের ছাদে চলে যান। এ সময় অনেক যাত্রীদের সঙ্গে তিনি স্ত্রী সোনিয়া ও মেয়ে তাবাচ্ছুমকে নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেন। ঝাঁপ দেওয়ার পর তাবাচ্ছুম তাঁর হাতের মধ্যেই ছিল। এরপর সাঁতরানোর সময় হঠাৎ করে হাত পিছলে তাবাচ্ছুম ছুটে যায়। এ সময় তাকে আবার পায়ের কাছে অনুভব করে কোনোরকমে পা দিয়ে টেনে কাছে নেন। আবার হাতে নিয়ে সাঁতরে কিছু দূর এগিয়ে যেতেই হাত থেকে ছুটে যায় তাবাচ্ছুম। কিছুক্ষণের মধ্যেই একমাত্র মেয়েকে নদীতে হারিয়ে ফেলেন তিনি।

এ কথা বলতে বলতে নাছরুল্লাহ তুহিন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ছিলেন। তিনি বলেন, এরপর তীরে উঠে সুগন্ধা নদীর আশপাশ, দিয়াকুল গ্রামসহ নলছিটি ও ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে খোঁজ নিয়েছেন। এ খোঁজ করতে করতে একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়লে স্বজনেরা তাঁকে ও স্ত্রী সনিয়া আক্তারকে বাড়িতে নিয়ে এসেছেন। তবে অন্য আত্মীয়স্বজন শুক্রবার রাতে ও শনিবার সকালে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল ও বরগুনায় খোঁজখবর দিচ্ছিলেন। এর মধ্যে বেলা একটার দিকে খবর পান, তাবাচ্ছুমের লাশ বরগুনায় পাওয়া গেছে।

গতকাল শুক্রবার রাত থেকে তাবাচ্ছুমের মতো দেখতে এক শিশুর ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তাবাচ্ছুমের স্বজনদের দাবি, ছবির শিশুটিই তাবাচ্ছুম। এ ঘটনায় ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল ও বরগুনা সদর হাসপাতালের মর্গে অনেক খোঁজাখুঁজির পর বরগুনায় তাবাচ্ছুমের মরদেহ পাওয়া যায়।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যায়, একটি শিশু সাদা চাদরের ওপর চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। তবে শিশুটি বেঁচে আছে কি না, সেটা বোঝার উপায় নেই। ওই ছবিতে সাদা গ্লাভস পরা একটি হাত ওই শিশুর মাথায় থাকতে দেখা যাচ্ছে। সাদা গ্লাভস পরা হাত দেখে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা ধারণা করেন, শিশুটি কোনো হাসপাতালে আছে। 

জাতীয় থেকে আরও পড়ুন

বরগুনা নৌ দুর্ঘটনা পাথরঘাটা মরদেহ উদ্ধার বরিশাল বিভাগ অগ্নিকাণ্ড

আপনার মন্তব্য লিখুন...