ঢাবির বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সভায় হট্টগোল
অনলাইন ডেস্কঃ
প্রকাশিত: ০৫:১১ এএম, শনিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২২ আপডেট: ০৫:১১ এএম, শনিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২২
এক সদস্যের সদস্যপদ স্থগিত করা নিয়ে হট্টগোল ও বাহাসে জড়িয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ শাখার নেতা-কর্মীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের শিক্ষক লাউঞ্জে এ ঘটনা ঘটে।
সংগঠনটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাদা দলের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের অংশ হিসেবে বিভিন্ন ইউনিট থেকে নাম প্রস্তাব করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ শাখা সাদা দলের সভা ডাকা হয়েছিল। রুদ্ধদ্বার এই সভায় মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান এ বি এম শহীদুল ইসলাম ও অধ্যাপক মিজানুর রহমানের পুরোনো একটি দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। শহীদুল ও মিজানুর দুজনই সাদা দলের সমর্থক।
এর আগে গত ১২ মে মার্কেটিং বিভাগের জার্নাল কমিটির সভায় এক নারী সহকর্মীর নিবন্ধ উপস্থাপন না করা নিয়ে এ বি এম শহীদুল ইসলামের সঙ্গে মিজানুর রহমানের কথা-কাটাকাটি ও উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। মিজানুর রহমান এ সময় শহীদুল ইসলামকে হত্যার হুমকি দেন বলে অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনায় মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুষদ শাখা সাদা দলের আহ্বায়ক বরাবর একটি চিঠি দেন শহীদুল ইসলাম। এর পরিপ্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। পাশাপাশি মিজানুরের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়। এর মধ্যে মার্কেটিং বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মীজানুর রহমানের সভাপতিত্বে শিক্ষকদের এক অনানুষ্ঠানিক সভায় আলোচনার ভিত্তিতে শহীদুল ও মিজানুরের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসন করা হয়। এরপর গত ১ সেপ্টেম্বর শহীদুল ইসলাম ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ শাখা সাদা দলের আহ্বায়ক বরাবর আরেক চিঠিতে তাঁর অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু সাদা দলেরই আরেকটি অংশ তা মানতে নারাজ। মূলত এ নিয়েই বৃহস্পতিবারের সভায় হট্টগোল হয়।
ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ শাখা সাদা দলের আহ্বায়ক মো. শহীদুল ইসলাম জাহিদ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জানান, ‘সভায় হট্টগোল ও উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছে। কোনো একটা বিষয় নিয়ে (সাদা দল থেকে) সাময়িক অব্যাহতি পাওয়া একজন শিক্ষকের ব্যাপারে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আমরা সেই কমিটির প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছি। সাধারণ নর্মস হলো, অব্যাহতি পাওয়া কেউ সাধারণত (দলীয়) সভায় আসেন না। কিন্তু তিনি এসেছিলেন এবং বেশ উত্তপ্ত ছিলেন। তাঁর (অব্যাহতির) বিষয়টা নিয়ে তিনি নানাভাবে কথা বলার চেষ্টা করেছেন এবং উত্তপ্ত কথাবার্তা বলেছেন। কমিটির সদস্যদেরও কারও কারও সঙ্গে সাংঘর্ষিক কথাবার্তা হয়েছে। এসব নিয়েই একটু হট্টগোলের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।’ অবশ্য কারও নাম উল্লেখ করেননি ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের এই অধ্যাপক।
সভায় থাকা একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, সাদা দলের এই সভায় শিক্ষকদের দুই পক্ষ হাতাহাতিতে জড়িয়েছে। এ প্রসঙ্গে শহীদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, ‘এ বিষয়টা নিয়ে আমরা লজ্জিত। হট্টগোলের একপর্যায়ে কে কার গায়ে গিয়ে পড়েছেন!’
অবশ্য যাঁকে ঘিরে সাদা দলের সভায় হট্টগোল হয়েছে, সেই শিক্ষক মিজানুর রহমান দাবি করেছেন, সভায় তর্ক-বিতর্ক হয়েছে, হাতাহাতি হয়নি। তিনি বলেন, ‘মার্কেটিং বিভাগের জার্নাল সংক্রান্ত একটি বিষয় নিয়ে বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে একটু মনোমালিন্য হয়েছিল। তখন চেয়ারম্যান এ বি এম শহীদুল ইসলাম অনুষদ শাখা সাদা দলের কাছে একটি অভিযোগ করেছিলেন যে তাঁর সঙ্গে আমি দুর্ব্যবহার করেছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগের একাডেমিক কমিটিতে বসে আলোচনা করে বিষয়টির সমাধান করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘এরপর (সাত-আট মাস আগে) আমি চার দিনের জন্য কানাডায় গিয়েছিলাম। আমার অনুপস্থিতিতে সাদা দলের এক সভায় চেয়ারম্যানের সেই চিঠি নিয়ে আসা হয়। সেখানে আমার (সাদা দলের) সদস্যপদ স্থগিত করা হয় এবং একটি ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি করা হয়। কিন্তু দলের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ শাখার আহ্বায়ক আর কোনো সভা ডাকেন না!’
মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘যে চিঠির ভিত্তিতে আমার (দলীয়) সদস্যপদ স্থগিতের সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছিল, সেই অভিযোগটি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম পরে লিখিতভাবে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তবু তারা (সাদা দলের অন্য অংশ) ওই ঘটনার তদন্ত করতে চান। সাদা দলের আজকের (বৃহস্পতিবার) সভায় ৪ জন বাদে বাকি ৮-৯ জন শিক্ষক বলেন, অভিযোগ প্রত্যাহারের পর তো এ নিয়ে তদন্তের কিছু নেই এবং সদস্যপদ স্থগিতের বিষয়টিও খাটছে না। সভায় এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়, কোনো হাতাহাতি হয়নি।’