Oops! It appears that you have disabled your Javascript. In order for you to see this page as it is meant to appear, we ask that you please re-enable your Javascript!
ঢাকা, শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০২৩  |  Friday, 31 March 2023  |  এখন সময়:

Advertise@01680 34 27 34

কোয়ান্টাম কম্পিউটারের দৌড়েও চীন নিয়ে মাথাব্যথা মার্কিনদের


অনলাইন ডেস্কঃ

প্রকাশিত:   ০৪:১২ পিএম, বৃহস্পতিবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট:   ০৪:১২ পিএম, বৃহস্পতিবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১  
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের দৌড়েও চীন নিয়ে মাথাব্যথা মার্কিনদের
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের দৌড়েও চীন নিয়ে মাথাব্যথা মার্কিনদের

এশিয়ার পরাশক্তি হিসেবে চীন সম্ভাব্য সামরিক ব্যবহারসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিতে নেতৃত্বের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে দেশটি অতি–উচ্চক্ষমতার কম্পিউটার প্রযুক্তি তৈরি করছে বলে ধারণা পশ্চিমা বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের মতে, এটি হতে পারে কোয়ান্টাম প্রযুক্তি কম্পিউটার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের তৃতীয় ক্ষমতাধর সেনাবাহিনী রয়েছে চীনের। কোয়ান্টাম কম্পিউটারের উন্নয়ন করতে পারলে তা দেশটির সেনাবাহিনীকে সাহায্য করবে। ভয়েস অব আমেরিকার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। অপর দিকে দীর্ঘ দিন ধরে কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে গবেষণা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা। ২০১৯ সালেই মার্কিন প্রতিষ্ঠান গুগল কোয়ান্টার কম্পিউটার তৈরির ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। ওই সময় তারা প্রথমবারের মতো ‘কোয়ান্টাম সুপ্রিম্যাসি’ অর্জন করার দাবি করে।

কোয়ান্টাম কম্পিউটিং হলো এমন এক ধরনের কম্পিউটিং যা উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন যন্ত্রকে এমন সমস্যা সমাধান করে দেয়, যেটা সাধারণ কম্পিউটারের জন্য খুব কঠিন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কম্পিউটিং শক্তি (কম্পিউটারের গাণিতিক হিসাব-নিকাশ) ব্যাপকভাবে সম্ভাবনাময় হয়ে ওঠায় কোয়ান্টাম কম্পিউটারে আগ্রহ বেড়েছে। এ কম্পিউটার ব্যবহার করে নতুন উপকরণ শনাক্ত, ওষুধের বিকাশ বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো দিকগুলো উন্নত করা যেতে পারে।

১৯৮০ সালে মার্কিন পদার্থবিদ রিচার্ড ফাইনম্যান কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের ধারণা দেন। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষকেরা ২০১৯ সালের একটি গবেষণায় বলেন, কোয়ান্টাম কম্পিউটারের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ব্যবহার রয়েছে। এটি গোপন সামরিক বার্তা বুঝতে পারে এবং সুরক্ষিত যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে ফেলতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ের ড্যানিয়েল কে ইনোয়ে এশিয়া প্যাসিফিক সেন্টারের অধ্যাপক আলেকজান্ডার ভুভিং বলেন, তাঁর ধারণা চীন কোয়ান্টাম কম্পিউটারের গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যাপক অর্থ খরচ করেছে। তিনি বলেন, চীন সরকার সামরিক বিকাশের জন্য বেসামরিক লোকজন ও কোম্পানি ব্যবহার করে।

মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তি পরামর্শক বুজ অ্যালেন হ্যামিল্টন গত মাসে বলেন, আগামী এক দশকে চীন কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহার করে নানা তথ্য বের করতে সক্ষম হবে। এর মধ্যে ওষুধ ও রাসায়নিকের নানা তথ্য থাকতে পারে।

তবে চীন কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির পথে কতটা এগিয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি। চীন বিষয়ে মার্কিন কংগ্রেসে দেওয়া দেশটির প্রতিরক্ষা বিভাগের ২০২১ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়ার পরাশক্তি হিসেবে চীন সম্ভাব্য সামরিক ব্যবহারসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিতে নেতৃত্বের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চীনের ১৪তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অনেক ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম প্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়টি রয়েছে।

বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইডিসির গবেষক হিদার ওয়েস্ট বলেন, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং লুকানো সামরিক যানবাহন খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারে। অন্য দেশের সামরিক বাহিনী সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়ার সুযোগ করে দিতে পারে এ কম্পিউটার।

তবে বিশ্বজুড়ে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলেই জানান ভুভিং। আবার অনেক দেশ এটি তৈরি করতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ভারত, জাপান ও জার্মানি এই দৌড়ে রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে যে দেশই প্রথম হোক না কেন, তারা বেশি দিন রাজত্ব করতে পারবে না। কারণ, অন্য দেশগুলো দ্রুত তা নকল করে ফেলবে।

কোয়ান্টাম কম্পিউটারের অগ্রগতি
২০১৯ সালে কম্পিউটিং হিসাবের দিক থেকে বা পারফরম্যান্স বিবেচনায় প্রচলিত সব কম্পিউটারকে ছাড়িয়ে যাওয়ার দাবি করে গুগল। যখন কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠান বা দেশ জটিল সমস্যার সমাধান অত্যন্ত কম সময়ে করতে পারবে, তখনই বলা যাবে যে তারা কোয়ান্টাম সুপ্রিম্যাসি অর্জন করেছে। ‘নেচার’ সাময়িকীতে এ-সংক্রান্ত গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। গুগল দাবি করে, সেকামোর কোয়ান্টাম প্রসেসর নির্দিষ্ট যে কাজ ২০০ সেকেন্ডে সম্পন্ন করতে সক্ষম, তা বিশ্বের সেরা সুপার কম্পিউটারের সম্পন্ন করতে ১০ হাজার বছর লাগবে।

তবে গত মাসে দ্রুতগতিসম্পন্ন বা সুপারফাস্ট কম্পিউটার তৈরির প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিনস করপোরেশন বা আইবিএম একটি উন্নত কোয়ান্টাম প্রসেসর ‘ইগল’ উন্মোচন করার ঘোষণা দেয়। 

আইবিএমের দাবি, কম্পিউটিং জগতে বিপ্লব আনতে পারবে এই যন্ত্র। উন্নত কম্পিউটারের নাগালের বাইরের সমস্যাগুলোও সমাধান করতে সক্ষম হবে এটি। বিবিসির খবরে বলা হয়, ব্যবহারিক কাজের উপযোগী বড় আকারের কোয়ান্টাম কম্পিউটার নির্মাণে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে। ফলে কোয়ান্টাম কম্পিউটার এখনো পরীক্ষাগারেই রয়ে গেছে।

কোয়ান্টাম কম্পিউটার অদ্ভুত উপায়ে পদার্থের খুব সূক্ষ্ম আচরণও ধরতে পারে। ক্ল্যাসিক বা প্রথাগত কম্পিউটারে তথ্যের একককে বিট বলা হয়। এর মান ধরা হয় ১ বা ০। কিন্তু কোয়ান্টাম ব্যবস্থায় কিউবিট একই সময়ে ১ বা ০ হতে পারে।

কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সুবিধা অনেক। বিজ্ঞানীদের মতে, প্রথাগত কম্পিউটার যে অল্পসংখ্যক জটিল সমস্যার সমাধান করতে গলদঘর্ম হয়, সেসব সমস্যার সমাধান এক লহমায় করতে পারবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। ফলে ওষুধশিল্প থেকে শুরু করে তেলশিল্প সবখানেই বিপ্লব আনতে পারে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। বিশেষ করে পদার্থবিদ্যা ও রসায়নের জটিল গাণিতিক সমস্যার সমাধান দ্রুত করে ফেলা যাবে। 

তৈরি হবে নতুন ওষুধ। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক অ্যালগরিদম আরও উন্নত করা যাবে। এমনকি যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রাথমিক রূপ নিয়ে বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন, সেটিও শিগগির উন্নত করে ফেলা যাবে।

আইবিএমের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও গবেষণা পরিচালক দারিও গিল বলেন, ইগল প্রসেসর কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ক্ষেত্রে বড় পদক্ষেপ। প্রয়োজনীয় কাজের ক্ষেত্রে প্রথাগত কম্পিউটারকে ছাড়িয়ে যাবে এটি। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং প্রায় প্রতিটি খাতকে রূপান্তর করার ক্ষমতা রাখে এবং সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা মোকাবিলা করতে সহায়তা করতে পারে।

ঝুঁকিতে অনেক দেশ
চেন ই-ফ্যান তাইওয়ানের তামকাং বিশ্ববিদ্যালয়ের কূটনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একজন সহকারী অধ্যাপক। চেন বলেন, তাইওয়ান, যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সবাই চীনের জন্য কোয়ান্টাম কম্পিউটিং আক্রমণ শুরু করার সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু। যতক্ষণ না দেশগুলোর প্রতিরক্ষায় শক্তিশালী কোয়ান্টাম ক্রিপ্টোগ্রাফি তৈরি করা না হচ্ছে, ততক্ষণ ঝুঁকি থেকে যাবে। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন, ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন ও জ্বালানি বিভাগ মিলে ৫ বছরে কোয়ান্টাম গবেষণা ও উন্নয়নে ৬২ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার খরচের ঘোষণা দেয়।

আইডিসির গবেষক হিদার ওয়েস্ট বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগে প্রচুর গবেষণা ও উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছি। তবে সম্ভাবনার বিষয়টি না বুঝলে তারা কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে অর্থ ঢালবে না। 

কার্ল থায়ার অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিষয়ের একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। তিনি বলেন, ছোট দেশগুলো কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পারবে না। এ জন্য দরকার প্রকৌশলী, কারিগর ও যথেষ্ট অর্থ।

বিবিসি, রয়টার্স, ভয়েস অব আমেরিকা অবলম্বনে

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি থেকে আরও পড়ুন

এশিয়া প্রযুক্তি পণ্য অস্ট্রেলিয়া কম্পিউটার চীন যুক্তরাষ্ট্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

আপনার মন্তব্য লিখুন...