Oops! It appears that you have disabled your Javascript. In order for you to see this page as it is meant to appear, we ask that you please re-enable your Javascript!
ঢাকা, বুধবার, ২২ মার্চ, ২০২৩  |  Wednesday, 22 March 2023  |  এখন সময়:

Advertise@01680 34 27 34

যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার অবস্থান পরিবর্তনের কারণ


অনলাইন ডেস্কঃ

প্রকাশিত:   ১১:০৩ পিএম, রবিবার, ২৭ মার্চ ২০২২   আপডেট:   ১১:০৩ পিএম, রবিবার, ২৭ মার্চ ২০২২  
যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার অবস্থান পরিবর্তনের কারণ
যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার অবস্থান পরিবর্তনের কারণ

ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর রাশিয়ার বাহিনীর প্রধান লক্ষ্য ছিল রাজধানী কিয়েভ দখলের। কিন্তু শুক্রবার রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ঘোষণা দেয়, তাদের এখন মূল অগ্রাধিকার হচ্ছে ইউক্রেনের রুশপন্থী সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল দনবাসকে পুরোপুরি মুক্ত করা। তখন তারা দাবি করে, ইউক্রেন অভিযানে প্রথম ধাপের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। এখন যুদ্ধের নতুন ধাপ শুরু হলো। তারা এ-ও দাবি করে, এই সামরিক অভিযানের মাধ্যমে ইউক্রেনের যুদ্ধসক্ষমতা কমিয়ে আনা গেছে।

এখন প্রশ্ন জাগছে, কোথায় গিয়ে থামবে এই যুদ্ধ? রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন কি তাঁর উচ্চকাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য থেকে পিছু হটছেন কি না? বিশ্লেষকদের মতে, কিয়েভের উপকণ্ঠে অনেক জায়গায় রুশ বাহিনী আত্মরক্ষামূলক কৌশল নিয়েছে। এটার মাধ্যমে ইউক্রেনের বাহিনীর শক্ত প্রতিরোধের বিষয়টিই ইঙ্গিত করছে। অন্যদিকে আগামী দিনগুলোয় রুশ বাহিনী খুব ছোট লক্ষ্য নিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে দনবাসকে নতুন কৌশলগত পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করতে পারে মস্কো।

রুশ বাহিনী ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থানে প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়েছে। এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা অনেক দেশ ইউক্রেনে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ ত্বরান্বিত করেছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইউক্রেনের সেনারা আক্রমণাত্মক ভূমিকায় যুদ্ধ করেছেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা। চলতি সপ্তাহেই ইউক্রেনের সেনারা কৃষ্ণসাগরের উপকূলে একটি বড় রুশ জাহাজে হামলা চালিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার শীর্ষ সামরিক কমান্ডার কর্নেল জেনারেল সের্গেই রুদসকয় দনবাসকে মুক্ত করার প্রধান লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা দেন।

এর প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার প্রতি যুদ্ধ বন্ধ ও শান্তি আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে তিনি এটাও মনে করিয়ে দেন, ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা নিশ্চিত করতে হবে। শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে ইউক্রেনকে বিভক্তির চেষ্টা দেশটির জনগণ মেনে নেবে না।

‘এটা বিরতির লক্ষণ’
প্রথমে পুতিন যখন ইউক্রেনে হামলার নির্দেশ দেন, তখন তিনি বলেছিলেন, দেশটিকে নিরস্ত্রীকরণ ও নব্য নাৎসিবাদের উত্থান ঠেকাতে এই অভিযান। একই সঙ্গে ২০১৪ সাল থেকে রুশপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা দনবাসের চূড়ান্ত স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথাও তিনি বলেন। এ জন্য তিনি ইউক্রেনে সেনাবাহিনী পাঠান। রুশ সেনারা কিয়েভের উপকণ্ঠ অবধি পৌঁছে যান।

চার সপ্তাহের যুদ্ধে অস্ত্র ও রসদের সংকটে পড়েছে রুশ বাহিনী। কিয়েভের পতন ঠেকিয়ে রেখেছে ইউক্রেনের বাহিনী। এ বিষয়ে মস্কোভিত্তিক সামরিক বিশ্লেষক পাভেল ফেলজেনহার আল-জাজিরাকে বলেন, চলমান যুদ্ধে রুশ বাহিনী সাময়িক বিরতি দিয়েছে। তারা বোঝাতে চাইছে, সবকিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

শাসনব্যবস্থা বদলায়নি
কাতারের দোহা ইনস্টিটিউটের ক্রিটিক্যাল কনফ্লিক্ট স্টাডিজের চেয়ারম্যান ওমর আশর বলেন, ‘কিয়েভ দখল করা রাশিয়ার লক্ষ্যের মধ্যে আর নেই। রুশ সেনাদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড এমনটাই মনে হচ্ছে। আমার মনে হয়, কিয়েভে শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে আপাতত সফল হয়নি রাশিয়া। তাই তারা চূড়ান্ত লক্ষ্য ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে সীমিত রাখতে চাইছে।’ এই বিশ্লেষকের মতে, রাশিয়া তিনটি বিস্তৃত লক্ষ্য নিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়েছে। কিয়েভ দখল, দক্ষিণাঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং মারিউপোলের মতো বড় ও গুরুত্বপূর্ণ শহর দখলে নেওয়া। এসব লক্ষ্য পূরণে রাশিয়া কতটা সফল, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধ
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ গত সপ্তাহে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া তাদের আচরণ কিংবা কৌশল বদলেছে, এটা বলার মতো সময় এখনো আসেনি। যদিও কয়েক দিনের যুদ্ধ পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে, ইউক্রেনীয়রা বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধ গড়তে সফল হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের অধ্যাপক স্টিফেন বাইডেল বলেন, রাশিয়ার নীতিনির্ধারকেরা বুঝতে পেরেছেন, ভুল পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে তাঁরা যুদ্ধ শুরু করেছেন। একসঙ্গে দেশটি ইউক্রেনের বিভিন্ন প্রান্তে সেনা মোতায়েন করেছে। এখন রাশিয়া তাদের লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট করার চেষ্টা করছে। দেশটি দনবাসকে নতুন কৌশলগত পয়েন্ট বানাতে চাইছে।

বিকল্প খুঁজছে রাশিয়া
অনেক বিশ্লেষকের দাবি, ইউক্রেন যুদ্ধে চূড়ান্ত পরাজয় স্বীকারের বিকল্প খুঁজছে রাশিয়া। এ জন্য দেশটি কিয়েভের পতন না ঘটিয়ে তাদের সামরিক লক্ষ্য দনবাসের স্বাধীনতা নিশ্চিতে সীমিত করে আনতে চাইছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাংক লেক্সিংটন ইনস্টিটিউটের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক লরেন থম্পসনের মতে, ইউক্রেনে দ্রুত বিজয় অর্জনের আশা করেছিলেন পুতিন। কিন্তু বাস্তবে সেটা হয়নি।

পশ্চিমা অস্ত্রের জোরে ইউক্রেন প্রত্যাশার তুলনায় ভালো প্রতিরোধ গড়েছে। এ পরিস্থিতিতে রাশিয়ার সামনে যে প্রশ্নটি দেখা দিয়েছে তা হলো, যুদ্ধ প্রলম্বিত হলে নতুন করে আরও কি মূল্য চোকাতে হবে?

আধুনিক ও সুপ্রশিক্ষিত রুশ বাহিনী ইউক্রেনে যেভাবে বাধার মুখে পড়েছে, তা অনেককেই হতাশ করেছেন। রুশ বাহিনীর প্রস্তুতির ঘাটতি, সমন্বয়হীনতা চোখে পড়েছে। ন্যাটোর তথ্য অনুযায়ী, প্রথম চার সপ্তাহের যুদ্ধে ৭ হাজার থেকে ১৫ হাজার রুশ সেনা নিহত হয়েছেন। এটা রাশিয়ার কৌশলগত ব্যর্থতার প্রকাশ। সাবেক মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট গেটসের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডে পুতিন হতাশ হয়েছেন।

যুদ্ধ শুরু করার আগে পুতিনকে তাঁর সামরিক কর্মকর্তাদের অনেকেই বলেছিলেন, কয়েক দিনের মধ্যেই কিয়েভ দখল করতে পারবে রাশিয়া। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে পর্যুদস্ত করা সম্ভব হবে। তবে বাস্তবে এমনটা না হওয়া পুতিনের হতাশার বড় কারণ। তাই এখন বিকল্প কৌশলে সংকট সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে রাশিয়া।

আন্তর্জাতিক থেকে আরও পড়ুন

রাশিয়া রাশিয়া ইউক্রেন সংঘাত ইউক্রেন ন্যাটো রাশিয়া-ইউক্রেন ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্র

আপনার মন্তব্য লিখুন...